ডেস্ক নিউজ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ আসনের মধ্যে প্রায় প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি। কেন একই আসনে একাধিক প্রার্থী দিচ্ছে এই নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলছেন, মোটাদাগে তিনটি কারণে একই আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে নেতাদের নামে থাকা মামলা, কেউ যদি ঋণ খেলাপি হয়ে থাকেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এক আসনে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সমঝোতা করে একজন প্রার্থীই থাকবেন বলে তারা জানিয়েছেন।

বিএনপির নেতারা বলছেন, গত ১২ বছরে বিএনপির নেতাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। অনেকের মামলার সাজাও হয়েছে। কেউ কেউ এখনও কারাগারে রয়েছেন। আবার নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আদালতকে ব্যবহার, অনেক নেতার নামে থাকা মামলাগুলোর শুনানি পিছিয়ে জামিন বাতিল করা হচ্ছে। ফলে নির্বাচনের আগে কোনও প্রার্থীর সাজা হলে বা কেউ কারাগার থেকে মুক্ত না হতে পারলে, সেখানে বিকল্প প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে। এছাড়া কারও প্রার্থিতা ঋণ খেলাপির কারণে বাদ পড়ে যেতে পারে। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি এক আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যদি কোনও কারণে একজন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়ে যান, তাহলে বিকল্প প্রার্থীর প্রয়োজন পড়বে। আমার ধারণা সেজন্য এক আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। যেন কোনও আসন প্রার্থী শূন্য না থাকে।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘মামলা, ঋণ খেলাপি বা অন্য কোনও কারণেও প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা অনেক আসনে বিকল্প প্রার্থী দিচ্ছি।’

দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার নামে রাজনৈতিক মামলার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দশন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। কারও কারও বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধানও করছে। ইতোমধ্যে অনেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। যদি নির্বাচনের আগে এসব অভিযোগের কারণে কারও প্রার্থিতা বাতিল করা হয়, সেই বিবেচনা নিয়েও অনেক আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দুদক অনুসন্ধান করছে। এই কারণে তিনি এবং তার ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন কুমিল্লার একই আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। এখন কোনও কারণে যদি খন্দকার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে সেই আসনে উনার ছেলে নির্বাচন করবেন।’

দলটির স্থায়ী কমিটির একটি সূত্র জানায়, এক আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে কেউ যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না হতে পারে। যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যদি একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তাহলে সেখানে হয়তো অন্য আরেকজন মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। সেটি মাথায় রেখে একই আসনে এখন একাধিক প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু কিছু আসনে মামলা-মোকাদ্দমার কারণে প্রার্থিতার ঝুঁকি থাকতে পারে। এই কারণে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। এছাড়া এর ফলে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকেব না। সারাদেশে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছেন। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না।’

বরিশাল-৬ আসন থেকে দুই জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এরমধ্যে একজন হলেন- আবুল হোসেন খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দলে থেকে যদি চূড়ান্তভাবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, তাহলে ধানের শীষ এখানে বিজয়ী হবে। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।’

বিএনপির নেতারা বলছেন, একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার কারণে সবাই চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় মাঠে থাকবে, ফলে তৃনমূলে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিও বাড়বে।

সোমবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এক আসনে একাধিক প্রার্থী দিচ্ছি। কারণ, কোন কারণে যদি একজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়, তখন সেই আসনে যেন বিকল্প প্রার্থী থাকে।’

প্রসঙ্গত, নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই ২ ডিসেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।