সিবিএন ডেস্ক:
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় সোয়া ২১ লাখ ভোটার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট দেবেন। এ নির্বাচনে ৬টি আসনের ৮০০টি কেন্দ্রের ৪২৬৭টি ভোটকক্ষে ইভিএম থাকবে। আর ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন ভোটার জন্য সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের ইভিএমে ভোট দেবেন। দৈবচয়ন বা লটারির মাধ্যমে বেছে নেয়া এইসব আসনের বর্তমানে তিনটিতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ও তিনটিতে জাতীয় পার্টির এমপি রয়েছেন।

সোমবার দৈবচয়নের মাধ্যমে বেছে নেয়া আসন ছয়টি হলো- ঢাকা-৬ ও ১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২। ইসির সিনিয়র মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন দৈবচয়ন পদ্ধতির আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন। কম্পিউটার প্রোগামের মাধ্যমে এ কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের সামনে ৬টি আসন বাছাই করেন। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে এসব কেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, ইভিএমের প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি করে ইভিএম থাকবে; কোনো ধরনের ত্রুটি দেখা গেলে ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকবে তিনটি করে ইভিএম।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে পাঁচটি ভোটকক্ষ থাকে। ইভিএমের জন্য ৪০০-৫০০ ভোটারের জন্য প্রতি ভোটকক্ষে একটি ইভিএম রাখা হবে। ভোটের জন্য কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার ইভিএম লাগবে। এর দ্বিগুণের বেশি প্রস্তুত রাখা হবে জরুরি প্রয়োজনে।

৬টির কোন আসনে কে এমপি আছেন
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব ইভিএমের আসনে বর্তমানের আওয়ামী লীগের তিনজন ও জাতীয় পার্টির তিনজন এমপি রয়েছেন। ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-৬ আসনে জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ, রংপুর-৩ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সাতক্ষীরা-২ আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান।

এবার কোন আসনে কে মনোনয়ন পেলেন
তবে এবার ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মিজানুর রহমান খানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ঢাকা-১৩ আসনেও আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানককে বাদ দিয়ে সাদেক খানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। চট্টগ্রাম-৯ আসনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ (বাবলু) এমপি থাকলেও এবার আওয়ামী লীগ থেকে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নওফেল চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহীউদ্দীন আহমদের ছেলে। রংপুর-৩ আসনে বর্তমান এমপি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি এবার। খুলনা-২ আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মুহাম্মদ মিজানুর রহমানকে মনোনয়ন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ জুয়েলকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা-২ আসনে বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি হলেও এখন পর্যন্ত ওই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো মনোনয়ন দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে মহাজোটের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

ইভিএম এলাকায় ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ
এই ছয় সংসদীয় আসনে এবার ৮০০টি কেন্দ্র ৪২৬৭টি ভোটকক্ষ। রংপুর-৩ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৩০টি, ভোটকক্ষ ৯১০; খুলনা-২ ভোটকেন্দ্র ১৫৭, ভোটকক্ষ ৬৮২; সাতক্ষীরা-২ ভোটকেন্দ্র ১৩৭, ভোটকক্ষ ৬৯৮; চট্টগ্রাম-৯ ভোটকেন্দ্র ১৪৪, ভোটকক্ষ ৭৪৩; ঢাকা-৬ ভোটকেন্দ্র ৯৮, ভোটকক্ষ ৫৩৩; এবং ঢাকা-১৩ ভোটকেন্দ্র ১৩৪, ভোটকক্ষ ৭০১।

ইভিএমের এলাকা ও ভোটার
রংপুর-৩ আসন হচ্ছে রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা। এ আসনের ভোটার সংখ্যা হচ্ছে চার লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েই খুলনা-২ আসন। এর ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৯৪ হাজার ২ জন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-২ আসন। ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৬ হাজার ২৬৮ জন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৫-২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৩১ থেকে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েই চট্টগ্রাম-৯ আসন। ভোটার সংখ্যা হচ্ছেইতন লাখ ৯০ হাজার ৩৬৩ জন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ থেকে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-১৩ আসন। এর ভোটার সংখ্যা হচ্ছে তিন লাখ ৭২ হাজার ৭৬৯ জন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৪, ৩৭ থেকে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। এ আসনের ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৬৯ হাজার ২৭৬ জন।

ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণার দেয়ার পর ইসি সচিব জানান, ৪৮টি আসনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭টি আসন, দক্ষিণ ৭টি আসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩টি আসন এবং অন্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১০টি আসন এবং জেলা পর্যায়ের সদর উপজেলার ২১টি আসন রয়েছে।

এখান থেকে ৬টি আসন ‘লটারিতে’ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে ১টি, দক্ষিণ সিটির ১টি, চট্টগ্রাম সিটির ১টি, অন্য সিটির ২টি এবং সদর উপজেলা থেকে ১টি আসন রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এর মধ্যে মাত্র ৬টি আসন খুবই নগন্য। পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম শহরাঞ্চলে ব্যবহার করা হবে। এবার সাড়ে চার হাজারের মতো ইভিএমের প্রয়োজন পড়তে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ইভিএম এই ছয়টি আসনে দেয়ার মতো আমাদের সকল প্রস্তুতি আছে। আগামী ৩০ তারিখের মধ্য আমাদের চাহিদা অনুয়ায়ী সকল ইভিএম আমরা পেয়ে যাবো। আমাদের বেজমেন্টে (ইসি ভবন) বসে প্রস্তুতি নেয়া হবে। সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের কর্মকর্তারা, আমাদের টেকনিক্যাল পারসান নির্বাচন কমকর্তারা মিলেই এ কাজটা করবে। পোলিং অফিসারদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

-জাগো নিউজ