ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনটি জেলার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সব রাজনৈতিক দলের কাছেই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও নিদর্শন এখানে রয়েছে।
রামুতে সেনানিবাস, বৌদ্ধমন্দিরসহ অনেক পুরাকীর্তি বিদ্যমান। দেশের পর্যটন শিল্পের সিংহভাগ রাজস্ব আসে এই আসন থেকে। এই আসনে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে পর্যটন শিল্প বিকাশ ও এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। সদর-রামুর মতো গুরুত্বপূর্ন আসনটি এখনো ঝুলে আছে। একেক জন একেক রকম মন্তব্য করলেও কোন তথ্য সঠিক মনে করা হচ্ছেনা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রার্থীতা চূড়ান্ত হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করলেও নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে তা নিশ্চিত করা হয়নি।
এমপি কমলের মিডিয়া উইং নিতীশ বড়ুয়ার কাছে রবিবার (২৫ নভেম্বর) রাত ৯ টায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে তাদের কাছে এ সংক্রান্ত কোন খবর নেই বলে উত্তর দেন।
তিনি বলেন, আমরা উড়ো কথায় বিশ্বাস করতে পারছিনা। মনোনয়নবোর্ডের চূড়ান্ত কাগজ হাতে পেলেই বলতে পারব।
এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে দেয়া হয়েছে বলেও প্রচার হচ্ছে। ফাইপ লাইনে আছেন জেলা মহিলা অওয়ামী লীগের সভানেত্রি কানিজ ফাতেমা। অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তদবিরে পিছিয়ে নেই।
এদিকে, ‘বহিরাগত প্রার্থী’ ঠেকাতে এবং সাইমুম সরওয়ার কমলকে মনোনয়ন দিতে কক্সবজার শহর, সদরের ঈদগাঁও, রামুসহ বিভিন্ন স্থানে কলাগাছ রোপন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে তার সমর্থকেরা।
রোববার (২৫ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের মনোয়ননে কমলকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়া উদ্দীন বাবলুকে কক্সবাজার-৩ আসনে প্রার্থী করার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে কমলের সমর্থকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়া উদ্দীন বাবলুকে ঠেকানো ঘোষণা দিয়ে কমলকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধান সড়ক বিভিন্ন স্থানে কলাগাছ রোপন করে। একই সাথে কলাগাছ নিয়ে বিক্ষোভ করে।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে ভোটের পরিসংখ্যান:
কক্সবাজার সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন এবং রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৩ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৬৮টি।
সদর উপজেলায় ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৩৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ ও এক লাখ ২১ হাজার ৪ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার ১৮ জন।
রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৬১ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৮১ হাজার ৪১০ জন পুরুষ ও ৭৬ হাজার ৬০৮ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৮ হাজার ১৮ জন।
এদিকে, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। রবিবার বেলা ১১ টার দিকে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্রটি জাফর আলমের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম স¤পাদক স¤পাদক আলমগীর চৌধুরী।
এ আসনে ভোটের পরিসংখ্যান:
চকরিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন এবং পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-১ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১৩৯টি।
চকরিয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়নের ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে এক লাখ ৪৮ হাজার ৮০৫ জন পুরুষ ও এক লাখ ৩৫ হাজার ৬০৬ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন।
পেকুয়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৫৫ হাজার ৬২০ জন পুরুষ ও ৫০ হাজার ৬৫০ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬ হাজার ২৭০ জন।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি মুঠোফোনে প্রার্থী নিজেই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ২৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির পত্রটি তাকে হস্তান্তর করা হয়।
এ আসনে ভোটের পরিসংখ্যান:
কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভার ৮টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-২ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮১ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি।
কুতুবদিয়া উপজেলায় ৬ ইউনিয়নের ৩৭টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৪৪ হাজার ২৩ জন পুরুষ ও ৪০হাজার ৪৪২ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৫ জন।
মহেশখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ৬৮ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৯ জন পুরুষ ও ১ লাখ ১ হাজার ৬৬৭ নারীসহ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৬১৬ জন।
কক্সবাজার-৪ আসনে (টেকনাফ-উখিয়া) আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী। ২৫ নভেম্বর সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ আসনে ভোটের পরিসংখ্যান:
উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং টেকনাফ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়েই কক্সবাজার-৪ আসনটি গঠিত।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০৬ জন। ভোটকেন্দ্র সংখ্যা ১০০টি।
উখিয়া উপজেলায় ৪৫টি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৬০ হাজার ৪৮৮জন পুরুষ ও ৫৮ হাজার ২৯৭ জন নারী মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন।
টেকনাফ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে ৫৫ ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে ৭২ হাজার ৫২২জন পুরুষ ও ৭৩ হাজার ৯৯ নারীসহ ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার ৬২১ জন।
জেলা নির্বাচন অফিস সুত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলার ৪টি পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের ৫১২ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ জন। সেখানে ৭ লাখ ৭ হাজার ৮৩১ জন পুরুষ এবং ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৩ জন মহিলা। ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৮টি।