|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

কক্সবাজার জেলা শহরে তিনটি বৃহৎ খেলার মাঠ ছিল। তারমধ্যে একটি হচ্ছে-শহরের পূর্ব পার্শ্বে প্রধান সড়ক সংলগ্ন রুমালিয়ার ছরা কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মাঠ। সবার কাছে যেটা পিটি স্কুল মাঠ হিসাবে বহুল পরিচিত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে-শহরের দক্ষিণ বাহারছরা গোলচক্কর মাঠ। তৃতীয়টি হচ্ছে- শহরের হলিডে মোড়ের পশ্চিম পার্শ্বে সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক জেলে পার্ক ময়দান।

পিটিস্কুল মাঠে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য লীডারশীপ ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করতে গিয়ে মাঠটির প্রায় তিন চতূর্থাংশ দু’বছর আগে দখল করে ফেলা হয়েছে। লীডারশীপ ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় জনসাধারণ ও পরিবেশবাদীরা খেলার মাঠটি দখল নাকরে ট্রেনিং সেন্টারটি জেলা সদরের অন্য কোথাও অথবা প্রয়োজনে প্রাইভেট জমি অধিগ্রহন করে সেটি নির্মাণের দাবি জানিয়ে কিছুদিন আন্দোলনও করেছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই দাবি আমলে নানিয়ে পিটিস্কুল খেলার মাঠের অধিকাংশ জায়গা দখল করে সেন্টারটির নির্মাণকাজ শুরু করে দেয়। খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১৫% পর্যন্ত কাজ চলার ফান্ডের অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরখানেক আগে কাজটি বন্ধ করে দিয়ে চলে গেছে।

দ্বিতীয় গোলচক্কর মাঠটির জমি গণপূর্ত বিভাগের। গণপূর্ত বিভাগ গোলচক্কর খেলার মাঠটিতে মাস ছ’য়েক আগে চর্তূপাশে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। এখনো দেয়ালের ফিনিসিং কাজ চলছে। ফলে উন্মুক্ত এই খেলার মাঠটিতে আমাদের সন্তনেরা আর খেলাধুলা করতে পারছেনা বেশ কিছুদিন ধরে। গোলচক্কর মাঠে দেয়ালের কাজ শুরু হওয়ার আগে মাঠটিতে খেলাধূলার লক্ষে উন্মুক্ত রাখার জন্য দাবী জানিয়ে একটু আন্দোলন হলেও সেটা আর বেশীদুর এগোয়নি।

তৃতীয় খেলার মাঠ ঐতিহাসিক জেলে পার্কটির পূর্ব পাশ অর্থাৎ পুরাতন ঝিনুক মার্কেটের দিকে অনেক আগে থেকেই দখল হচ্ছিল। গত ২৩ নভেম্বর থেকে জেলে পার্কে মাঠি ভরাট করা হচ্ছে, একেবারে জোরে শোরে। একসাথে কয়েকটি রোডরোলার দিয়ে ভরাটকৃত মাটি রোলিং করা হচ্ছে। এমনভাবে মাঠি ভরাটের কাজ চলছে, দেখলে মনে হবে এটা যেন একটা যুদ্ধের ময়দান। কারা, কেন, কি উদ্দেশ্যে মাঠি ভরাট করে ঐতিহাসিক ময়দান তথা উন্মুক্ত খেলার মাঠটি দখল করে ফেলছে সেটা অনেক চেষ্টা করেও জানা সম্ভব হয়নি। অনেকেই সেখানে বলাবলি করছেন, দেশের একটি প্রভাবশালী ভূমি খেকো গ্রুপকে ঢাকা থেকে এই ময়দানটি দীর্ঘমেয়াদী লীজ দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আসলে এই জেলে পার্কটির মালিকানা কার? জেলা প্রশাসকের, গণপূর্ত বিভাগের নাকি কক্সবাজার পৌরসভার।

মূল কথা হচ্ছে, কক্সবাজার জেলা সদরের একে একে সকল উন্মুক্ত খেলার মাঠ কোন কোনভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কক্সবাজারের সচেতন মহল কি দেখছেননা? পরবর্তী প্রজন্ম কি এব্যাপারে আমাদের দোষারোপ করবেনা? যে ছোট খাট খোলা খেলার মাঠগুলো এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলো সুরক্ষায় আমাদের কি এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়? আমাদের সন্তানেরা কি শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলার জন্য শহরে কিছু উন্মুক্ত জমি পাবেনা? শিশু কিশোরদের জন্য কি আমরা উন্মুক্ত কোন খেলার মাঠ রেখে যেতে পারবোনা? এই প্রশ্ন কক্সবাজারের সকলের, বিশেষকরে কক্সবাজার শহর ও পার্শ্ববর্তী এলকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী নাগরিকদের। এবিষয়ে তরিৎ বোধদয় হউক সকলের।

(লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)