সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি:
আবারও মনোনয়ন দৌড়ে মনে হয় পিছিয়ে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে জীবনের প্রথম বারের মত মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছিলাম। অল্প বয়স, পরিচিতির স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মনোনয়ন বিবেচনায় অগ্রাধিকার ছিল-এই আসনটি বিএনপি-জামাতের, যাকে দিক না কেন হারবে। সাবেক সংসদ সদস্য জনাব মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলে তিনি ২য় বারের মত পরাজিত হয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন। আর সাইমুম সরওয়ার কমলকে দিলে পরাজিত হলেও ভবিষ্যতের জন্য তৈরী হওয়ার সুযোগ পাবেন। সে চিন্তা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলেন। ৯ দিন পর কয়েকজন বিশিষ্ট দলীয় নেতাদের তদবিরে জননেত্রী আবার জনাব মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেন। উনার হাতে ১১দিনের মত নৌকা ছিল। ইত্যবসরে নৌকার উপর নৌকা আসাতে মাঠ পর্যায়ে প্রকাশ্যে বিভক্তি হল। শ্রদ্ধেয় মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর ঋণ খেলাপীতা ধরা পড়লো। আমাকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হলো। আমি তখন আকর্ষনহীন ডামী প্রার্থী হয়ে গেলাম। যা হওয়ার তা হলো। অতীতের ৪০ হাজার ভোটের রেকর্ড ছাড়িয়ে ৮৭ হাজার পেলেও প্রথম বারের মত হেরে গেলাম। আমার ভাগ্য খারাপ!

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জরিপে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও জনাবা কানিজ ফাতেমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। সপ্তাহখানিক গণসংযোগ করে প্রার্থী বাছাই পর্বে তিনি আবার ঋণ খেলাপী ও বিল খেলাপী হয়ে গেলেন। অবশেষে আমাকে আবার ২নং প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হলো। নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে-জাতিসংঘে-কোরিয়া পার্লামেন্টে ব্যক্তিগত পারদর্শিতা ও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন এবং জনগনের পাশে দাড়ালেও আমার কিছু কাছের-দূরের মানুষেরা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিল না। আমার পিতা মরহুম ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীকে মাঝে মধ্যে এখনো স্বপ্নে দেখি। একদিন স্বপ্নে তিনি বলছেন-“তুমি যত কাজ করো তত সুনাম তারা হতে দেয় না।” আসলে আমার ভাগ্যটাই খারাপ।

আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে গত ১মাস আমি স্বস্থিতে নেই। আমরা ৭ ভাই বোনের মধ্যে ১ ভাই ১ বোন ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালে যেমন করে আমার বিরোধীতা করছিল এবারও তার চেয়ে শতগুন বেশি করে মান, সম্মান ইজ্জত ভুলে গিয়ে আমাকে মরন কামড় দিল। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগের স্তুপ জমা করে। অথচ জনমত জরিপে তাদের কোন পয়েন্ট ছিল না। সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তাদের নাম নাই। এ আমার বড় দুর্ভাগ্য!

খারাপ লাগে যখন আমার বিপক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জোটে আপন ভাই-বোনদের দেখি। বিব্রত হই যখন ব্যঙ্গরসে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় আমাদের পরিবারের কথাগুলো উঠে আসে। যা আমার পিতার আদর্শের পরিপন্থি। আমাদের ছেলে মেয়েরা বড় হচ্ছে। এ বিষয় যখন বিভিন্ন পত্রিকায় আসে তখন জনগনকে যেমন লজ্জা পাই তার চেয়ে বেশি নিজের ছেলে মেয়েদের লজ্জা পাই। নিজের ছেলে মেয়েদের সামনে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হবে ভেবে শংকিত হই। আমার মেয়ে এখন অনেক কিছু বুঝে। আমার ছেলের বয়স কম হলেও সে কিছু বুদ্ধি রাখে। পত্রিকায় কোন কিছু পেলে আমার জন্য রেখে দেয়। তবে স্বস্থির বিষয় তারা এখনো আমাকে কোন দিন কোন প্রশ্ন করেনি। প্রশ্ন করলে উত্তর কিভাবে দিব? যে পরিবারে আমার পিতা পর পর ৩ বার মনোনয়ন না পেয়ে অপমানিত হয়ে দীর্ঘদিন কাউকে মুখ দেখাতে পারেনি সে পরিবারে আমি মনোনয়ন এনে দিয়েছি। ১ভাই এম.পি থাকা অবস্থায় বড় ভাই ও ছোট বোনের এ নির্লজ্জ প্রতিযোগীতার প্রয়োজন কি তা আমি ভেবে পাই না। যাকে ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রেখে পর পর দুইটি নির্বাচনে সর্বোচ্চ আর্থিক ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েছিলাম তার কাছেও তো দুঃখ পেলাম। ভাগ্যটা আমার খারাপ! ঢাকার যারা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে অন্যদের মনোনয়ন দিতে পারেনি তারা আমার মনোনয়ন প্রাপ্তিকে এখনো মেনে নিতে পারেনি। দূর্ভাগা আমি।

অবশেষে গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংসদীয় বোর্ডে জনমত জরিপে ১নম্বরে থাকায় জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ড চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় আমার নামটি অনুমোদন দেয়। ১টি স্বস্থির সংবাদ পেলেও আমার প্রতিপক্ষরা আবার আক্রমন শুরু করে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের শোকাহত জানাজায় মুসল্øিদের সামনে তার নিঃস্ব পরিবারের থাকার জন্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক খন্ড জমি দান এবং মরহুমের ওছিয়ত মত তার গ্রামের বাড়ির রাস্তার নামকরণের বিষয়টিকে হাতিয়ার করে আমার দিকে ছুড়তে থাকে। এ যেন মানবতার বিরুদ্ধে হিং¯্র থাবা। ঢাকায় একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম- আর তাকে মনোনয়ন দেওয়া যাবে না।

অথচ মানবতার শিক্ষা আমাদের নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সঃ) শিখিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অনেক রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়ার কথা আমরা জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা মানুষকে শ্রদ্ধা ও ভালাবাসা কিভাবে জানাতে হয় তা আমাদেরকে শিখিয়েছেন। এ মাসেই তো তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপের সময়ে নাশকতার অভিযোগে অভিযুক্ত দেশের ২নাম্বার আসামী বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে লন্ডনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসী জেনেছে। গত ৫ দিন আগে বিএনপি নেতা চলচিত্রকার আমজাদ হোসেনকে চিকিৎসার জন্য ২০ লক্ষ টাকা প্রদান করে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

বিগত ৫ বছরে শত শত মানুষের ঘর বেঁধে দিয়েছি। ৮ হাজারের চেয়ে বেশী মানুষকে চাকুরী দিয়েছি। মসজিদ, মন্দির, রাস্তা ও সেতু উন্নয়নে কাজ করেছি। বন্যার সময় গত ১০ বছর ধরে মানুষকে সেবা দিয়েছি। কিছু চিহ্নিত চক্র আমার মানবতা মেনে নিতে পারছেন না। এ আমার দূর্ভাগ্য।

কয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠন যেগুলোর সদস্য আমিও আমাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করার আল্টিমেটাম দিয়েছে। তারা কি বুঝে না আমার কাছে মনোনয়নের চেয়ে মানবতা অনেক মূল্যবান। ক্ষমতার চেয়ে সম্মান অনেক মূল্যবান। অপমানের চেয়ে মৃত্যু অনেক মূল্যবান।