|| মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী ||

কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ নুরুল ইসলাম সেখানকার মসজিদের খতিবদের কাছে একটি ছাপানো ‘জরুরী নোটিশ’ পাঠিয়েছেন। গত ২৩ নভেম্বর শুক্রবার পাঠানো জরুরী নোটিশে মুসল্লীদের তিনি বলেছেন “যেসমস্ত পরিবারের ছেলেরা ডাকাতি বা সমাজ ও রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে জড়িত তাহাদের পিতা-মাতা বা সমাজের অভিবাবকদের অবগত করা হচ্ছে যে, আগামী ২৪ ও ২৫ নভেম্বরের মধ্যে র‍্যাবের সাথে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণ করার জন্য জনাব নুরুল ইসলাম মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করুন। যারা আত্মসমর্পণ করিবেন, তাহাদেরকে সরকার কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ও পূণর্বাসন করা হইবে। অন্যথায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ নাকরিলে গ্রেপ্তার পূর্বক ক্রসফায়ার দেওয়া হইবে”। এই জরুরী নোটিশে মোঃ নুরুল ইসলাম নিজে স্বাক্ষরও করেছেন। জরুরী নোটিশ প্রদানকারী মোঃ নুরুল ইসলাম জাতীয় শ্রমিক লীগ, কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার আহবায়ক হিসাবে নিজের প্রদত্ত নোটিশে উল্লেখ করেছন।
এই জরুরী নোটিশ জেলার সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। একজন দায়িত্বশীল ইউ পি সদস্য কিভাবে মসজিদের খতিবদের কাছে ‘জরুরী নোটিশ’ দিয়ে প্রকাশ্যে একরম ক্রসফায়ারের হুমকি দিতে পারেন? গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোঃ নুরুল ইসলামের জরুরী এ নোটিশটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। সবার প্রশ্ন, তিনি কি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চাচ্ছেন। র‍্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কি আদৌ এজাতীয় ক্রসয়ারের নোটিশ দিতে মোঃ নুরুল ইসলাম মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়েছেন? জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একজন সরকারদলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধির এধরনের একটা নোটিশ প্রদান নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

এবিষয়ে কথিত জরুরী নোটিশে প্রদত্ত মোঃ নুরুল ইসলামের ০১৭১৮৫৪৯৬৫৭ নং মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নোটিশ প্রদানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কুতুবদিয়ার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র‍্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করেই এই জরুরী নোটিশ দিয়েছি। মোঃ নুরুল ইসলাম মেম্বারের কথামতো র‍্যাবের কাছে এব্যাপারে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মোঃ নুরুল ইসলাম দলের কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার আহবায়ক। সে এরকম একটা জরুরী নোটিশ দিয়েছেন বলে জেনেছি, তবে সেটা মোঃ নুরুল ইসলাম মেম্বারের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, এব্যাপারে দলের কোন দায়দায়িত্ব নেই। বিষয়টি নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখনো নোটিশ প্রদানের বিষয়টা অবহিত নন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একজন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে যেকেউ সহযোগিতা করতে পারেন, কিন্তু বিচারহীন কথিত ‘ক্রসফায়ার’ এর হুমকি কেউ দিতে পারেননা। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেননা। আইনের দৃষ্টিতে এটা আরেকটা অপরাধ। আলোচিত এধরনের নোটিশ আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে এডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দ আলম জানান।
এবিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্ণধার কক্সবাজারের স্বনামধন্য পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করা হলে, তিনি নোটিশের বিষয়টি এখনো জানেননা বলে জানিয়ছেন। এ প্রতিবেদকের সাথে শনিবার বেলা দু’টোর দিকে মুঠোফোনে আলাপের সময় তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ থাকায় পরে এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে জানাবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। আলোচিত জরুরী নোটিশ সম্পর্কে ০১৭১৬১০৩৯৩৪ নং মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আকতার হোসাইন বলেন, ফেসবুকে এরকম একটা নোটিশ দেখেছি। তিনি বলেন, লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোঃ নুরুল ইসলাম র‍্যাবের কর্মকর্তাদের পরামর্শে হয়তঃ এধরনের জরুরী নোটিশ দিয়েছেন।