নিজস্ব প্রতিবেদক:
রামুর চাকমারকুলের পশ্চিম শাহ আহমদেরপাড়ায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি ব্রিক ফিল্ডের জমি দখলের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযম নামের এক ব্যক্তি সন্ত্রাসী-লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে রাতের আধারে ব্রিক ফিল্ডটির জমি দখলের জন্য হামলাও চালিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীর কক্সবাজার শহরের বাসায়ও রাতের বেলা হামলার ঘটনা ঘটে।

গত বুধবার গভীর রাতে ১০/১২টি মোটর সাইকেলযোগে ২০/২৫ জনের অস্ত্রধারী একদল সন্ত্রাসী ব্রিক ফিল্ডটির জমিতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে তারা কক্সবাজার শহরের সার্কিট হাউস রোডে ব্যবসায়ী নুরুল আলমের বাসায় গিয়ে তার কার গাড়ির চাকা পাংচার করে দেয়। একই সাথে তাকে হত্যারও হুমকি দেয়।

অথচ ওইদিন বুধবার বিকালে রামু থানা পুলিশের এসআই তানভীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিরোধীয় জমিতে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত নির্দেশনা জানিয়ে নোটিশ জারি করে আসেন। এ অবস্থায় ব্রিক ফিল্ডে স্থিত জমির মালিক ও মামলার বাদি ব্যবসায়ী এইচ এম নুরুল আলম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের শালিসের সিদ্ধান্ত, রামু থানা পুলিশের সিদ্ধান্ত সবকিছুই আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু দখলবাজ শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযম বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে আমার জমি দখল করে নিতে চায়। বাধ্য হয়ে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালত আমার পক্ষে আমার জমিতে শফিউল আযমকে প্রবেশে বারিত করেছেন। পুলিশ গিয়ে তাদের নোটিশ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আইনের আশ্রয় নেয়ায় শফিউল আযম ওরফে বিকে আযম ক্ষিপ্ত হয়ে গভীর রাতে সন্ত্রাসী নিয়ে আমার জমিতে গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাংচুর চালিয়েছে। আমার বাসায় গিয়েও আমার গাড়ির চাকা পাংচার করে দিয়েছে। উল্টো আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস.এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিরোধীয় জমিতে এডিএম কোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ সম্বলিত একটি বিষয়ে নোটিশ করে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাতে সেখানে কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুলতান আহমদ, আলী আহমদ ও রশিদ আহমদের কাছ থেকে ৪৫ শতক এবং মৌলভী আবু তাহেরের কাছ থেকে ৩৩ শতক জমি নিয়ে মোট ৭৮ শতক জমি ২০১৭ সালের ২৯ মে ১০৪০ নং রেজিঃযুক্ত কবলামূলে ক্রয় করেন রামুর পশ্চিম চাকমারকুলের নুর আহমদ সিকদারের পুত্র এইচ এম নুরুল আলম। ওই জমি ক্রয়ের পর তিনি ৩৬৬৮নং নামজারি খতিয়ান সৃজন করে এখনও ভোগ দখলে নিয়োজিত আছেন। এ অবস্থায় গত ২০১৭ সালের ২১ অক্টোবর এডভোকেট একে ফজলুল হক চৌধুরীর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ওই জমিতে স্থিত বিকে ব্রিক ফিল্ডের মালিক ভারুয়াখালির সাবেকপাড়ার মৃত হাজি ইয়াছিনের পুত্র শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযমের সাথে জমির মালিক এইচ এম নুরুল আলমের একটি সমঝোতা চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭-২০১৮ অর্থসালের পর ব্রিক ফিল্ডটি এইচ এম নুরুল আলমকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও শফিউল আযম ব্রিক ফিল্ড বুঝিয়ে দেননি। যার কারণে এইচ এম নুরুল আলমের পক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রশিদ শফিউল আযম বরাবরে লিগ্যাল নোটিশ ইস্যু করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সালিশী বৈঠকে বসেন রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন, রামু ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর কাশেম হেলালী, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সেলিম উল্লাহ, অর্থ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কোম্পানি, জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হক ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্রো। কিন্তু সালিশের সিদ্ধান্তও অমান্য করে এখন জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযম। এ অবস্থায় অসহায় হয়ে জমির মালিক ব্যবসায়ী এইচ এম নুরুল আলম গত ১৯ নভেম্বর কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এম.আর মামলা দায়ের করে ১৪৪ ধারামতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রার্থনা করেন। ওই মামলার শুনানী শেষে আদালত শফিউল আযমকে বিরোধীয় জমিতে প্রবেশে বারিত করেন। একই সাথে বারিত আদেশ কেন চূড়ান্ত করা হবে না তাও কারণ দর্শানো হয়। বিরোধীয় জমির শান্তিশৃংখলা বজায় রাখার জন্য রামু থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশ পেয়ে রামু থানা পুলিশ গত ২১ নভেম্বর বুধবার বিকালে ব্রিক ফিল্ড এলাকায় গিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা জানিয়ে দেন এবং উভয়পক্ষকে শান্তিশৃংখলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং পুলিশের নোটিশের ঘটনা জানতে পেরে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযম। তিনি ওই দিন রাতেই ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে ব্রিক ফিল্ড এলাকায় নুরুল আলমের জমিতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা চলছে। বিরোধীয় জমির বিষয়ে শালিস প্যানেলে থাকা রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন বলেন, ‘নুরুল আলম ও শফিউল আযমের বিরোধীয় বিষয় নিয়ে গণ্যমান্য ৬জন ব্যক্তি নিয়ে আমরা শালিসে বসেছিলাম। তারা দু’জন আমাদের শালিস করার ক্ষমতাও দিয়েছিলেন। আমরা উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে শালিসের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। সিদ্ধান্তটি উভয়পক্ষ মেনে নেয়ার কথা। কিন্তু পরে শফিউল আযম সিদ্ধান্ত মানতে কালক্ষেপন করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি রামু থানার ওসি বরাবরে যায়। কিন্তু সেখানেও যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাও মানতে রাজি নন শফিউল আযম প্রকাশ বিকে আযম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় কেউ যদি শালিসের সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে আমাদের কি করার আছে?’