মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলা সহ চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ২০ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে বেলা দেড়টার মধ্যে অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া’র গুলশান কার্যালয়ে গত দু’দিনের মতো মনোনয়ন পেতে আবেদন জমাকারীদের দলীয় আমলনামা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা দলের জন্য কষ্টিপাথরে যাচাই করা নিবেদিত প্রাণ নেতা কিনা? দলের দুঃসময়ে দল ত্যাগ করবে কিনা? স্ব স্ব আসনে গোপনে মাঠ জরীপের তথ্যও পর্যালোচনায় রাখা হবে। দলের জন্য ত্যাগ, সাংগঠনিক দক্ষতা, মাঠের জনপ্রিয়তা, কর্মী ও জনবান্ধবতা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত পরিচিতি, প্রার্থীর নিজস্ব ইমেজ, আর্থিক সঙ্গতি, ওয়ান ইলাভেন পরিস্থিতির সাথে নেতিবাচক সম্পৃক্ততা, দলের জন্য অবদান, দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য সংগঠনের প্রার্থী কে হচ্ছেন ইত্যাদিসহ আরো অনেক বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে। এক্ষেত্রে দলীয় আমলনামা যাচাই করে যাঁদের ভোট যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা বেশী তাঁদেরকেই দলীয় মনোনয়নে অধিকতর প্রাধান্য দেয়া হবে। বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী থাকায় এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বিএনপি’র মনোনয়ন বোর্ডের সামনেই মনোনয়ন প্রার্থীদের এই দলীয় পুলসেরাত পার হতে হবে। এ কঠিন পরীক্ষাতে উত্তীর্ণরাই দলীয় মনোনয়ন নামক সোনার হরিণের টিকেট হাতে পাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য সংগঠন, রাজনৈতিক সচেতন ও কৌতুহলী ভোটার, সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভক্ত-অনুসারীদের এবিষয়ে চিন্তা ও আলোচনার যেন শেষ নাই। কাকে দিলে ভোট যুদ্ধ জমবে, কাকে দিলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সহজে জয়ী হবে এসব চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে মাঠে ময়দানে, চায়ের দোকানে, আড্ডায় সর্বত্র।

তবে কক্সবাজার-১, কক্সবাজার-৩ এবং কক্সবাজার-৪ আসনে বিএনপি, ২৩ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অনেকটা নির্ধারণ করা রয়েছে বলে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রদানের সাথে জড়িত একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছেন।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, বর্তমানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং এ অবস্থানরত, তিন বারের একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, মাঠে অত্যন্ত জনপ্রিয়, মেধাবী রাজনীতিবিদ সালাহউদ্দিন আহমদ অথবা তাঁর সহধর্মিনী একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট হাসিনা আহামদ বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তি শতভাগ নিশ্চিত রয়েছে।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও একই আসনের সাবেক নির্বাচিত সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র মনোনয়ন প্রদানের সাথে জড়িত স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী একজন সদস্য। এ আসনের নির্বাচনী ময়দানও রয়েছে লুৎফুর রহমান কাজলের সম্পূর্ণ অনুকূলে। ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসাবে পরিচিত লুৎফুর রহমান কাজলের এ আসনে সাংগঠনিক অবস্থানও খুবই দৃঢ়। দলীয় মাঠ জরীপও তাঁর অনুকূলে রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি’র দূর্দিনের পরীক্ষিত সৈনিক হিসাবে খ্যাত লুৎফুর রহমান কাজল ইতিমধ্যে তাঁর প্রাক নির্বাচনী কার্যক্রমও এই এলাকায় শুরু করে দিয়েছেন। এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়ার আশায় সাবেক সংসদ সদস্য ও সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত ইন্ঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান এবং প্রায় একযুগ আগে বিএনপিতে আসা কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান বিএনপি’র মনোনয়ন প্রাপ্তির আবেদন ফরম বোর্ডে জমা দিলেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দল থেকে এদু’জনকে কোন ধরনের গ্রিন ‘সিগন্যাল’ দেয়নি বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে চার চার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শাহজাহান চৌধুরী বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী এ আসনে নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন বলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে সাংগঠনিক অবস্থানের গোপনীয় মাঠ জরীপও বেশ অনুকূলে রয়েছে বলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সুত্র দাবি করেছে। এ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নের প্রত্যাশায় সাবেক ছাত্রনেতা, আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রীম কোর্টের তরুন আইনজীবী এডভোকেট সালাহউদ্দিন সিকদার এবং বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় বিএনপি থেকে বহিস্কৃত উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী মনোনয়নের আবেদন ফরম বোর্ডে জমা দিলেও তাদের মনোনয়ন লাভের কোন সম্ভবনা নেই বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ২৩ দলীয় জোট ভূক্ত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা, একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের মনোনয়ন পাওয়ার কথা শুরু থেকে শোনা গেলেও যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার দায়ে তিন মাসের সাজা ভোগ করায় তিনি কি আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন? নাকি তিনি বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়েছেন? এই প্রশ্নে ২৩ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আগে থাকলেও তা এখন আবার ক্ষীন হয়ে উঠেছে। এই আসনে ইতিমধ্যে বিএনপি’র মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আরো যাঁরা রয়েছেন, তাদের মধ্যে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের টানা দু’বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য, নির্বাচনী যুদ্ধের পাকা করিগর বলে পরিচিত ও কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী, সদ্য দলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা একই এলাকার দু’বারের সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক দু’বারের চেয়ারম্যান, মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কারাবন্দী আবুবকর সিদ্দিক এবং কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি, মহেশখালী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট নুরুল আলম। তাঁরা সকলে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় আবেদন ফরম বোর্ডে জমা করেছেন। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হলো, শেষপর্যন্ত উপকূলীয় এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক কার ভাগ্যে জুটছে।

(লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, ঢাকা।)