বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দখল ও অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আমিন শানুসহ ৬ প্রতিষ্ঠানের ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। ১৮ নভেম্বর চট্রগ্রাম পরিবেশ আদালতের বিচারক সানজিদা আফরিন দিবা এ গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।

যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন, হোটেল বে প্যারাডাইস এর স্বত্বাধিকারী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল আমিন শানু, এস্টেটিক প্রপার্টিজ এর চেয়ারম্যান ঢাকা মহাখালীর বাসিন্দা মুত ইমদাদুল হক খানের ছেলে কামরুজ্জামান খান ও একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ঢাকা লালমাটিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল করিম শেখের ছেলে কামরুল হাসান, কক্সবাজার সার্ফ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মেটাল প্রাইভেট লি. এর স্বত্বাধিকারী ঢাকা নর্থ গুলশান এলাকার বাসিন্দা মৃত জামিল উদ্দিন আহমেদ এর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাদিক জামিল ও একই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী ঢাকা নর্থ গুলশান এলাকার বাসিন্দা মৃত মোবাশ্বির উদ্দিনের ছেলে আমিনুল ইসলাম, হোম স্টোন প্রপার্টিজ লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা সুত্রাপুরের ওয়ারী এলাকার বাসিন্দা মৃত শামসুল আলমের ছেলে শহীদুল আলম ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডালিয়া আলম, ডেসটিনি গ্রুপের ক্রাউন প্যাসিফিক বিচ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও ফকির গ্রুপের কর্মচারী কলাতলীর বাসিন্দা নাজির হোসেনের ছেলে কামাল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবি আকতার হোসেন জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিবেশ সংকাটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) সাগর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সৈকত দখল করে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের অভিযোগে ৪ ডেভেলপার কোম্পানিসহ ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ আগষ্টস্ট কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি করন পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সভাপতি এম ইব্রাহিম খলিল মামুন।

জানাযায়, মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ডেভেলপার কোম্পানি ফকির গ্রুপ, সি-ওয়েভ, হোম স্টোনের টাইটানিক ইরা (বর্তমান হোটেল সি প্রিন্সেস) ও কক্স টাইটানিক, ডেসটিনি গ্রুপের ক্রাউন প্যাসিফিক, হোটেল সি-ক্রাউন ও হোটেল বে প্যারাডাইস। আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের তৎকালীন পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাবকে। তিনি একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস’া গ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে চট্রগ্রাম পরিবেশ আদালতে একটি আবেদনও করেন। কিন্তু পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাব ঢাকায় বদলি হয়ে যাওয়ায় পরে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল অত্যন্ত গোপনে মুল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার প্রতিবেদন জমাদেন। ওই বিতর্কিত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিলে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশদেন। এরপর আদালতের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার র্কাালয়ের পরিদর্শক জাহানারা ইয়াছমিনকে। তিনি তদন্ত শেষে সম্প্রতি আদালতে দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদন জমাদেন।

এ প্রসঙ্গে মামলার বাদি ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সভাপতি এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের কর্মচারীকে আসামী করলেও মালিক পক্ষের কাউকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। তাই বিতর্কিত এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও শীঘ্রই আদালতে নারাজি দেয়া হবে।
গ্রেফতারী পরোয়ানার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার প্রতি সন্তুষ্ট প্রকাশ করে তিনি বলেন, আসল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার কারণে সৈকত দখলসহ পরিবেশ বিধ্বংসী বিভিন্ন কার্যক্রমে উৎসাহিত হবে সাধারণ লোকজন।