বিশেষ প্রতিবেদক:
অবশেষে মাইনাসই হলো দেশজুড়ে নানা বির্তক নিয়ে আলোচনায় থাকা সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের টিকিট পাচ্ছেন বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী। আজ কালের মধ্যে দল থেকে এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দলটির নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। এনিয়ে সাংসদ বদি মুখ না খুললেও ইতোমধ্যে তিনিও বিষয়টি জেনে গেছেন।
জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদে ইয়াবা ইস্যুতে তুমুল বিতর্কে আছেন আবদুর রহমান বদি। এছাড়াও তার পেছনে লেগে আছে শিক্ষক পেটানো, প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত, সম্পদ গোপন করে কর ফাঁকিসহ আরও বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয়। কর ফাঁকির অভিযোগে একবার কারাভোগও করতে হয়েছে বদিকে।
বদির একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে দলকে প্রতিনিয়ত বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বদি বিরোধী। তারা প্রতিনিয়ত বদির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিষোদাগার করে। কিন্তু এসব ছাপিয়ে বদির জনপ্রিয়তাও কম নেই উখিয়া-টেকনাফে। সাধারণ মানুষ তাকে (বদি) সুখ-দুঃখের বন্ধু হিসেবে চিনে। তাই দলের গুটি কয়েক নেতাকর্মী বিরোধীতা করলেও সাধারণ মানুষের দাবি ছিল বদিকে মনোনয়ন দেয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ আর সেই পথে হাঁটছে না। বিতর্ক এড়াতে বদির হাতে নৌকা দেওয়া হচ্ছে না এবার।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়ে এ আসন থেকে ২০০৮ সালে ও ২০১৪ সালে পর পর দুইবার জাতীয় সংসদে যান আবদুর রহমান বদি। টানা ১০ বছর সাংসদ থাকার সুবাধে বিএনপির দুর্গে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন তিনি। কিন্তু ইয়াবা ও অন্যান্য ইস্যুতে তৈরি হওয়া বিতর্কগুলো শেষ পর্যন্ত তার (বদি) জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তা থাকা স্বত্বেও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে নৌকার মনোনয়ন।
দলটির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে তারা বিতর্কিত কোন সাংসদকে দলের মনোনয়ন দেবে না। পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন দিয়ে অতীতের বিতর্কগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
এই আসন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে অন্তত ৪/৫ জন প্রার্থী দলগতভাবে শক্তিশালী। কিন্তু দলীয় অবস্থান শক্ত হলেও প্রায় সবারই জনপ্রিয়তায় ভাটা। কিন্তু সাংসদ বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তায় সবার এগিয়ে। এছাড়াও উখিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে তিনি। উখিয়াজুড়ে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান।
সবদিক বিবেচনা করে শাহীন চৌধুরীকেই দলটি মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তাকে মনোনয়ন দিলে একদিকে যেমন দল পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী পাবে, অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়েও বিতর্কে পড়তে হবে না। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, বদির জনপ্রিয়তাও তার স্ত্রীর ঝুলিতে যোগ হবে। তাই তাকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত।
তবে তাকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্তটি শেষ মুহুর্তে এসে পরিবর্তনও হতে পারে বলে জানিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রটি।
কে এই শাহীনা আক্তার চৌধুরী :
শাহীনা আক্তার চৌধুরী কি শুধুই সাংসদ বদির স্ত্রী? না,তার আরও অনেক বড় পরিচয় আছে। শাহীনা চৌধুরী উখিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ঠাণ্ডা মিয়া ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা। ছোটভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপাালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। চাচী অর্থ্যাৎ হামিদুল হক চৌধুরীর স্ত্রী নিগার সুলতানা উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
শাহীনা আক্তার চৌধুরী ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান। পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘দল থেকে এখনো মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকার মনোনয়ন দেন, তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য যা করার সব করবো।’