আলমগীর মাহমুদ


সুপ্রভাতে দক্ষিণ যাত্রা কপাল লিখন মোর।দখিণা হাওয়ার মোহে নয়,একঝাঁক তরুণ তরুণীর নিখাদ ভালবাসার টানে।কলেজে পড়াতে গিয়ে এই অর্জন ছাড়া বাড়তি কিছুই নেই সঞ্চয়ের গোলাঘরে।

‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’– ক্ষিধের যাতনার চেয়ে শক্তিধর জিনিস ভালবাসা। মনের সাম্রাজ্যের অধিপতি যখন দরদ ।সে ক্ষুধার্ত থেকেও হাসিমুখে হাঁটতে পারে মাইলের পর মাইল।

ভালবাসা শক্তি, সাহস, প্রেরণা দেয় ঠিকই, কেড়ে নেয় জীবনবোধের ন্যায্য করণীয়। ভালবাসার মানুষটি বুঝে, সে দিনে দিনে নিঃশেষের পথে।মনে মনে ন্যায্য করণীয় পালনে জীবন চাকা ঘুরিয়ে নিজেরে বদলিয়ে নেবার স্বপ্ন জুড়ে।

করণীয় ঠিক করে ভাল হবার শপথ নেয় রাতে,সকালবেলা বালিতে গড়া বুড়ির ঘরের মত সব যায় অদৃশ্য হয়ে।আবার পুরানচিন্তা।এই অভিধার দুষ্টচক্রে কাটে ভালবাসার মানুষের জীবনপঞ্জি।

এমন রুটিন কর্মে দরজায় দুইযুগের কাছাকাছি সময়ের কড়া নাড়ছে আমার।এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে আজ যখন জীবনের কোথায় যোগের + , কোথায় – বিয়োগ চিহ্ন, হিসেব মেলাতে যাই মানসপটে সিনেমার পর্দার মতো একটা স্ক্রিন ভেসে উঠে যার গায়ে লেখা দেখি “ভালবাসায় বন্দী যে,কারাগারে সে” “ভালবাসায় আক্রান্ত মানুষ মানব সম্পদ বনে কম”।

অতি সামাজিক মানুষ , চরম ভালবাসার মানুষ সমাজবাস্তবতায় চরম খেসারত দেয়। সে তখন বুঝতে শেখে ভালবাসা সেতো ধারের দ্রব্য।সামাজিকতা সেতো খোলা পেট্রোল। ঠিক সেই সময়ে আশপাশের মানুষের জ্ঞানগর্ভ উচ্চারণ শোকহরণ মন্ত্র বনে তার।

সকাল ৭টা অতিক্রম করেনি তখনও। ঝিলংজা বি,ডি,আর ক্যাম্প থেকে লিংরোডগামী টমটমের সোয়ারী ।কৃষিখামারের নারিকেল বাগানের পর পর,কক্সবাজার বাস টার্মিনাল ছূঁই ছূঁই অবস্থানে যন্ত্রদানব।

রাস্তার পশ্চিম পাশ ঘেষে ভারের ভারে ন্যূজ বৃদ্ধ। শাখের ভার কাঁধে। সাদা দাড়ি।পরনে সাদা পাঞ্জাবি, লুঙ্গি।ভারের ভারে শিল্পাচার্য জয়নূল আবেদিনের আঁকা কাঠ বোঝাই ঠেলাগাড়িকে গরু আর মানুষ সর্বোতোশক্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে যে অসহনীয় জীবন সংগ্রামের দৃশ্য তার ছায়াকপিই দৃশ্যমান।

বৃদ্ধের জীবন সংগ্রামের এমন চিত্র পথিকের বুকে চিকুর মেরে হাই তুলছিল।কমবয়েসী ড্রাইভার বেশ আক্ষেপেই কইতে রইল ‘এই বৃদ্ধ প্রত্যেকদিন চান্দের পাড়া থেকে শাখের ভার নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বড়বাজার গিয়ে শাখ বিক্রি করে ফিরে।প্রত্যেকদিনই একই রুটিন।

ড্রাইভারের মনের মেঘ দেখে কই,’এমন পরিশ্রম করে বলেই এই বয়সেও সুস্থ,সাবলীল, বেশ দৃঢ় আছে।নইলে কবেই অদৃশ্য হত।কষ্ট, পরিশ্রম, মানুষের শত্রু নয় পরম বন্ধু। আগে মনে হত, না খাইলে বাঁচবে কেমনে ?আজ বুঝছি খাইলেই মানুষ মরে।না খাইলে মরে না।রসনাবিলাসই বেশীর ভাগ রোগের মূল।অতিভোজন প্রাণসংহারী।রোগের পিতা।

কায়িকশ্রমকে আমরা দুখ মনে করি ঠিকই।বাস্তবে সেইই আমাদের পরমবন্ধু। আপাতত তুমি নিশ্চিত থাকতে পার ডায়বেটিস এই বৃদ্ধের ধারে কাছেও পা মাড়াবে না।আমার কথায় হু,হা কিছুই বলছে না। চুপচাপ।

হঠাৎ বিষ্ময়মাখা নীরবতা ভেঙে বেশ আক্ষেপমাখা ধ্বনিতে কইতেই রইল “দুখরে রোগেও ভয় পায়!”


লেখক : বিভাগীয় প্রধান।সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। উখিয়া কলেজ,কক্সবাজার। alamgir83cox@gmail.com