সিবিএন ডেস্ক:
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও নজরদারিতে আর্মড পুলিশের একটি নতুন ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হচ্ছে কক্সবাজারে। আর্মড পুলিশের ১৪তম ব্যাটালিয়নকে অনুমোদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। এরপর, সচিব কমিটি গত ১ নভেম্বরের সভায় ব্যাটালিয়নটির অনুমোদন দেয়। শিগগিরই পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখা এই ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের কাজ শুরু করবে।

পুলিশ সদর দফতর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, মানব ও মাদকপাচার, জঙ্গি-সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ‘ইমারজেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

সর্বশেষ আর্মড পুলিশের নতুন ব্যাটালিয়নের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায়। এছাড়া, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনি সহায়তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কুইক রেসপন্স টিম, বিশেষ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

কক্সবাজারে নতুন ব্যাটালিয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে কক্সবাজারের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেয়। এছাড়া আগে থেকেই বাংলাদেশে কয়েকলাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালং, থাইংখালী, নোয়াপাড়া, বালুখালী ও উনপিপ্রাং-এর সাতটি ক্যাম্পে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গ অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি মানব পাচারকারীদের শিকার হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা প্রয়োজন। এসব রোহিঙ্গাকে নিরাপত্তা দেওয়া ও নজরদারি করা কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে কক্সবাজার জেলার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও নজরদারিতে কক্সবাজারে স্থাপনের জন্য গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতর থেকে আর্মড পুলিশের ১৪ তম ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই সময় তারা ৮৫০টি পদ সৃষ্টি করে এই ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাব করে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় যানবাহন দেওয়ারও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনাটি যাচাই-বাছাই শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৫৮৮টি পদ সৃষ্টি ও বিভিন্ন ধরনের ৪৭টি যানবাহন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে পাঠানো হয় সচিব কমিটিতে। এ ব্যাটালিয়নের আর্থিক খাতের ব্যয়ভার আপাতত পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করার কথাও বলা হয়। তবে আগামী অর্থ বছরে নতুন করে এ ব্যাটালিয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দেরও প্রস্তাব করে বলা হয়, যখন পুলিশের ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির বিভাজন প্রস্তুত এবং অনুমোদন করা হয়, তখন দেশের ভেতরে এ ধরনের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি কোনোভাবেই আঁচ করা যায়নি। যে কারণে কক্সবাজার জেলায় এ ধরনের কোনও ব্যাটালিয়ন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের সংস্থান ৫০ হাজার পদের বিভাজনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে নতুনভাবে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করায় ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই ভিন্নতর মাত্রা পেয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এনএম জিয়াউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কক্সবাজার এলাকার নিরাপত্তার জন্য একটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৪ আর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিাটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ শিগগিরই এ ব্যাটালিয়নের কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় শুরু করতে পারবে বলেও তিনি জানান।