নুরুল কবির, বান্দরবান :

বান্দরবানে আওয়ামীলীগের পর এবার বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। প্রথমে মনোনয়ন সংগ্রহে আওয়ামীলীগের ৯জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও গত তিন দিনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১২জন সম্ভাব্য প্রার্থী। বিএনপির পক্ষে বুধবার সর্বশেষ দুটি ফরম নেন জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী নিরুতাজ বেগম ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম। এদিকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের জন্য প্রভাবশালী দুটি দলের নেতাকর্মীরা তদবির জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন।

ভোটের হিসেব যাই হোক না কেন, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের দিকে বান্দরবানে আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। শুধু মনোনয়নপত্র কেনাতেই নয়, দলীয় কোন্দলেও বেসামাল অবস্থা বিএনপির।

বিএনপি:

মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরুর পর সোম ও মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন কিনেছেন জেলা বিএনপির সভানেত্রী ও সাবেক মহিলা সাংসদ মাম্যাচিং, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ সাচিং প্রু জেরী,সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ, ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির স্বাস্থ্য ও যুব বিষয়ক সম্পাদক ডা: এস এম সরোয়ার আলম

সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য লুসাই মং মারমা, সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আমির হোসেন আমু, লামা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান থোইনু অং চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানচি উপজেলা বিএনপি সভাপতি খামলাই ম্রো, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ।

এদিকে দীঘদিনের দলীয় কোন্দেলের প্রভাব দেখা দিয়েছে দলীয় মনোনয়ন ফরম ত্রুয়ের ক্ষেত্রে । যেমন মাম্যাচিং পক্ষে মনোনয়ন নিয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা ও সাচিং প্রু জেরীর পক্ষে মনোনয়ন কিনেছেন ১০জন।

প্রসঙ্গত, বান্দরবান জেলা বিএনপিতে জেরী মাম্যাচিং (মামী-ভাগ্নে) গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্ধ চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে মাম্যাচিংকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হলেও সাচিং প্রু জেরী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈসি নির্বাচিত হন।

সাচিং প্রু জেরী এ পর্যন্ত ৪ বার নির্বাচনে অংশ নেন এর মধ্যে ৩ বার দলীয় প্রার্থী হিসেবে ও একবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে তিনি বান্দরবান জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

আওয়ামী লীগ:

অন্যদিকে আওয়ামী লীগেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। গত ২২ বছরে এই দলটি থেকে এবারই প্রথম এক সাথে ৯ নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

মূল দল থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৬ জন ও প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের বিপক্ষে গিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন ৩ জন প্রার্থী। এরা হলেন পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শফিকুর রহমান, সহ-সভাপতি আবদুর রহিম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে জেলা থেকে বহিস্কৃত) কাজি মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষ্মীপদ দাশ, থানছি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মংথোয়াই ময়্র রনি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি (কেন্দ্র থেকে বহিস্কৃত) প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ও লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের নেতা (বর্তমানে বহিস্কৃত) থুইনি মং মারমা।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দল থেকে বহিস্কারের পর প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, কাজি মুজিবুর রহমান ও থুইনি মং মারমা এরা তিনজনই বীর বাহাদুরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। যদিও কাজি মুজিবুর রহমান বলছেন তাকে কেন্দ্র বহিস্কার না করায় এখনো তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

স্বতন্ত্র:

এক সময়ের জেলা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী ও সার্ক মানবাধিকার সংগঠনের সভানেত্রী বোমাং রাজ পরিবারের সদস্য ডনাই প্রু নেলী বান্দরবান জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বান্দরবান ৩০০নং আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে যত প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করুক না কেন মনোনয়ন পেলে মূল প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হতে পারে বীর বাহাদুর উশৈসিং, মা ম্যা চিং ও সাচিং প্রু জেরীর মধ্যে। এছাড়াও আওয়ামীলীগ থেকে বীর বাহাদুর উশৈসিং দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত ধরে নেওয়া গেলেও বহিষ্কৃত দুই নেতার মনোনয়ন সংগ্রহ এবং বিএনপির পক্ষে কয়েকজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর কারণে সর্বশেষ মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটে সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো কয়েকদিন।