সিবিএন ডেস্ক:
বিএনপির দৃষ্টিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল কিনা তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেশের কূটনীতিকেরা। জবাবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়। শুধু চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া। বিএনপির একাধিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সোমবার (১২ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় বিএনপি আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

শুরুতে কূটনীতিকদের লিখিত ব্রিফ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। এরপর কূটনীতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান।

কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্রিফিং সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির সহআর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়মিত ব্রিফিংয়ের অংশ হিসেবে আজ কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়েছে। সেখানে নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে যা জানতে চেয়েছে, তা জানানো হয়েছে।’

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির একজন সদস্য জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচটি দেশের কূটনৈতিকরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, এখন নির্বাচনের পরিবেশটা আসলে কী রকম। নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল কিনা। এর জবাবে আমরা বলেছি, নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল নয়। কারণ আমাদের দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার কথা না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি। এছাড়া দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, যুবলল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ড. শাহাদাতসহ বেশকিছু নেতার নাম উল্লেখ করে আমরা বলেছি তারাও কারাগারে রয়েছে। তাহলে কীভাবে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল হলো?।

বৈঠক সূত্র জানায়, কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে, বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি দল দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু, বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হয়নি। তাই এখন বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।

নির্বাচনের পরিবেশের পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নেই উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদেরকে পাঁচটি বিষয়ে লিখিত পেপার্স দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- খালেদা জিয়ার কারাগারের ও স্বাস্থের বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনের বিষয়, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, দলীয় নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা ও গ্রেফতারের তালিকা।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে আলোচনার বিভিন্ন বিষয়ও কূনীতিকদের লিখিত আকারে দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাও জানানো হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির দুই জন নেতা জানান, কূটনীতিকরা বিএনপির মনোনয়ন নিয়েও কথা বলেছেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ও সরকার বিএনপিকে কোনোভাবেই সাহায্য না করে বরং বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাও তুলে ধরা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান; ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবিহ উদ্দীন আহমেদ, জেবা আমিন খান, শামা ওবায়েদ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান ও অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী।

কূটনীতিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, পাকিস্তান, ইন্দেনেশিয়া, মরস্কোসহ বেশ কয়েকটি দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।