সিবিএন ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে তফসিল পুনর্নির্ধারণ করা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া চিঠিতে ভোট এক মাসের মতো পেছানোর দাবি জানিয়েছে এ জোট। এক্ষেত্রে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ভোট চায় তারা।
অবশ্য এই জোটের শরিক দলগুলো আগে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষে ভোটের তারিখ নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে সংসদের চলতি মেয়াদের শেষের দিকে ভোটের তারিখ নির্ধারণের নতুন দাবি জানিয়ে আসছে ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদ জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রয়েছে। আমরা এক মাস নির্বাচন পেছানোর দাবি করেছি। সেই অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ভোট চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমরা বেশি কিছু চাই না- সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারবে।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের দাবিও এক মাস নির্বাচন পেছানো। সেই হিসেবে আমরা জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট চাই।’প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবার (১১ নভেম্বর) নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদের ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণের মধ্যে সরকারের দুইটি চালাকি রয়েছে। এক হচ্ছে, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে বিদেশি পর্যবেক্ষক, কূটনীতিক ও সাংবাদিকরা ছুটিতে থাকবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে, ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষেও বিদেশিরা ছুটিতে থাকবেন। বিদেশিরা দেশে চলে যাবে- তখন সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো নির্বাচনে কারচুপি করতে পারবে।
নির্বাচন পেছানোর মধ্যে সরকারের চালাকি রয়েছে বলে মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই তারিখ আগের তারিখের চাইতেও খারাপ হয়েছে। কারণ বড়দিন উপলক্ষে বিদেশিরা প্রায় সবাই ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটিতে থাকবে। এছাড়া নির্বাচনের একদিন পরে, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন৷ ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন কি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা বাংলাদেশে থাকবে। বিদেশিরা তো সব দেশে চলে যাবে৷ সরকার তখন ইচ্ছামতো ব্যালট পেপারে সিল মারার সুযোগ পাবে৷ এই কারণে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।’
নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অনড় অবস্থানে রয়েছে বলে জানান জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি মানা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) বৈঠক করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকার নির্বাচন চাইলে আলোচনা করে পুনঃতফসিল দেওয়া সম্ভব।’
রব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের একদিন পরেই ইংরেজি নববর্ষ। ওই দিন দেশে কোনও কূটনীতিক ও বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে না। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই নির্বাচন বানচাল করতে এই কাজ করছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতকাল রবিবার (১১ নভেম্বর) নির্বাচনের তফসিল একমাস পেছানোর দাবিতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই অনুযায়ী তো জানুয়ারিতে আমরা ভোট চাই।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পুনর্নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমার শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ২ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর এবং ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারিত হয়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আবেদনের ভিত্তিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।