সিবিএন ডেস্ক:
চট্টগ্রাম কারাগারের জেলারের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত টিম ভৈরবে এসে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।

সোমবার সকালে গঠিত তদন্ত টিমের প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলমসহ ৪ সদস্যের টিম ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জসহ ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ সদস্য, মামলার বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার এবং কর্মচারীদের বক্তব্য গ্রহণ করেন।

তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ওই মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন, উপ-সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. ইকবাল হাসান। তদন্ত কমিটির টিমের সদস্যরা সোমবার সকালে ভৈরব এসে দুপুর পর্যন্ত রেলওয়ে রেস্টহাউজে উপস্থিত হয়ে সেদিনের ঘটনার বিবরণ ও রেলওয়ে থানা পুলিশ এবং রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন।

আগামীকাল মঙ্গলবার তদন্ত টিমটি কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত জেলার সোহেল রানার বক্তব্য গ্রহণ করবেন বলে তদন্ত কমিটির প্রধান এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

এ দিকে ঘটনার দিন জব্দকৃত আড়াইকোটি টাকার এফডিআর থেকে জেলারের স্ত্রী হোসনে আরা পপি ও তার শ্যালক রাকিবুল হাসান এক কোটি টাকা ময়মনসিংহের দুটি ব্যাংক থেকে তুলে নিলে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম হতবাক হন। তার স্ত্রীর নামে ময়মনসিংহের প্রাইম ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ছিল।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ শাখার প্রাইম ব্যাংক ম্যানেজার শরীফুল আহসান জানান, ওই এফডিআরটির মূল কপি ও রিসিট পেয়েই তার আবেদনে আমি হোসনে আরা পপিকে ৫০ লাখ টাকা পেমেন্ড করি। তার গ্রেফতারের বিষয়টি আমি কিছুই জানি না বলে তিনি জানান এবং জানা থাকলে এফডিআরের টাকা তাকে পেমেন্ড দিতাম না বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আবদুল মজিদ জানান, ঘটনার পরদিনই আমি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি অবহিত করি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তৎক্ষণাৎ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানায় বলে তিনি দাবি করেন। ময়মনসিংহ দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এই জানান, ব্যাংকের ম্যানেজার কৌশল করে কারসাজির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ টাকা তার স্ত্রীকে পেমেন্ড দিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, এত টাকা তার স্ত্রী ও শ্যালক কোথায় পেল তা তদন্ত করা হবে। টাকার উৎস্য বলতে না পারলে তারাও মামলার আসামি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যাংক থেকেও তার শ্যালক ৫০ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।

গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে রেলওয়ে পুলিশ ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, আড়াই কোটি টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করেন। পরে তাকে কারা কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করে। তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ পৃথক পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কারা কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের টিমটি গত বুধবার চট্টগ্রাম কারাগারে গিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করলেও এখনও ভৈরব থানায় তদন্ত করতে আসেনি। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪ সদস্যের টিমটি সোমবার ঘটনা তদন্তে ভৈরবে আসে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলম জানান, আমরা ভৈরবে এসে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ, উপস্থিত পুলিশ সদস্য ও মামলার বাদী, রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে বক্তব্য নিয়েছি। আগামীকাল অভিযুক্ত জেলারের বক্তব্য নেব। তদন্তের বিষয়ে তিনি আর কোনো বক্তব্য দিতে রাজী হননি।