সিবিএন ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে যাবে আর কে যাবে না-এ প্রশ্ন এখন আর কারও মনেই নেই। সব দল ও জোটই এখন নির্বাচনমুখী। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সব সংশয় আপাতত কেটে গেছে।

গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়। চলছে নানা সমীকরণ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমীকরণে এতদিন ছিল বিএনপিকে নিয়ে। কারণ এবারের নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা নিয়ে বড় ধরনের হিসাব রয়েছে ক্ষমতাসীনদের, যা রোববার খোলাসা হয়ে গেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফলে এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হিসাব তার শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে। কারণ আসন ভাগাভাগির হিসাবটা নিজেদের মধ্যেই।

তেমনই বিএনপির মধ্যেও রয়েছে কঠিন হিসাব। যদিও জোটবদ্ধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়; কিন্তু এবার বিএনপিকে জটিলতর এক জোট-রাজনীতি সামাল দিতে হচ্ছে। বিএনপি শরিক দলগুলোর পাশাপাশি যুক্ত রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। তাই হিসাবটা বেশ কঠিন।

এরই মধ্যে প্রধান দলগুলো তাদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেয়ার কাজও সেরে ফেলছে। আজ বিএনপি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে। নির্বাচনী হাওয়া বেশ জোরেশোরেই বইতে শুরু করেছে দেশব্যাপী। শুরু হয়েছে ১৪-দলীয় জোট এবং ২০-দলীয় জোট আর ঐক্যফ্রণ্টের মধ্যে আসন ভাগাভাগির ইঁদুর লড়াই।
কোন দল কতটা আসনে লড়বে তা নিয়েই চলছে দরকষাকষি। ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটে চলছে উত্তেজনা।

তেমনই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাঁচটি দলের মধ্যে বিএনপি বাদে বাকি দলগুলো ১৫০ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে। প্রতিটি দলই মনে করছে নিজেদের যথেষ্ট ভোট রয়েছে মাঠে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটি আসনে জোট শরিকদের ছাড় দেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ দলের কেউ-ই অংশ নেয়নি। বিএনপি, গণফোরাম, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে এবার গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি চারদলীয় জোট ২০০৮ সালে নির্বাচন করে। সেবার দলটি শরিকদের জন্য ৪১ আসন ছেড়েছিল। বিএনপি এবার একই সঙ্গে দুটি জোটভুক্ত। ২০–দলের সঙ্গে সম্প্রতি নতুন তিনটি দল যোগ হয়ে এটি এখন ২৩-দলীয় জোট। অন্যদিকে গত অক্টোবরে গঠিত হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটেও তারা সবচেয়ে বড় দল।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার বিএনপিকে অন্যবারের চেয়ে বেশি আসন ছাড়তে হবে। দুই জোটের শরিকদেরই আসনের চাহিদা বেশি। ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা নিজ দলের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করেছে। রোববার বিকাল থেকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে। অন্য দলগুলোও দু–এক দিনের মধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে বসবে।

গণফোরামের একটি সূত্র জানায়, তারা মনে করে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গণফোরাম। এবারের নির্বাচনে তাদের চাওয়া থাকবে ৭০-৭৫ আসন। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুতই তারা আসন ধরে প্রার্থী ঠিক করবে।

জেএসডি এবার ৩০-৩৫ আসন চাইবে। দলটির একজন শীর্ষ নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সব কটি দলেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সব দলই নিজেদের ভালো অবস্থান জানান দিতে চাইবে। এ নেতা বলেন, জেএসডি পুরনো একটি দল। ভোটেও তারা পিছিয়ে থাকবে না। সে হিসাব করেই তারা সাধ্য অনুযায়ী আসন নেয়ার চেষ্টা করবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সর্বশেষ যোগ দেয়া দল কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ।

সোমবার থেকে তারা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে। আলোচনা করে আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ দলটিও ২০টির মতো আসন চাইতে পারে। নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়নি নাগরিক ঐক্য। জোটভুক্ত হয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দলটির নেতারা। তবে এ দলের প্রার্থী আছেন বেশ কয়েকজন। স্বাভাবিকভাবেই এবার বিএনপিকে বেশি আসন ছেড়ে দিতে হবে।

বিএনপির এক নেতা জানান, এবার শরিকদের জন্য দলটি ৮০ আসন ছাড়ার কথা ভাবছে। কারণ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ও মাঠে ভোট কার কতটুকু আছে, সেটিই বিবেচ্য হবে।