ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। আসন্ন নির্বাচন একটি কঠিন পরীক্ষা। বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবারের নির্বাচনকে একতরফা হতে দেবে না। নির্বাচনের বিষয়ে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

গত শনিবার বোস্টনের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিমত তুলে ধরেন উড্রো উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম। জাস্ট নিউজ।

ফোর্জহেইমার হাউজে অনুষ্ঠিত ‘ইমপ্লিকেশন্স অব টার্গেটিং মিডিয়া অ্যান্ড জার্নালিস্টস অন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন কাউন্সিল (আইআরসি) এবং বাংলাদেশ প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স অব নর্থ আমেরিকা (বিডিপিএএনএ)।

বিডিপিএএনএ প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল আল হোসাইনি এবং আইআরসি প্রেসিডেন্ট অ্যালিসার যৌথ সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্য প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. শ্যারমেন টাইচম্যান, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের এশিয়াবিষয়ক গবেষক আলিয়া ইফতেখার, জাতিসঙ্ঘের বার্মা টাস্কফোর্সের প্রধান এডেম ক্যারল, জাতিসঙ্ঘ ও হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী, বিডিপিএএনএ-এর সাধারণ সম্পাদক তানভীর নেওয়াজ, ব্রান্ডিজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সাদেক কামাল (কবি সুফিয়া কামালের বড় ছেলে) এবং আজাদ খান।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সেমিনারে মাইলাম বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিয়ে বলছি, এবারের নির্বাচনে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। একতরফা নির্বাচনকে সহ্য করা হবে না।’ জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাথে যুক্ত এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রসারিত হতে চলেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি যারা সরকারের দমননীতির কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন অথবা আপস করে চলছেন। দেশের অগ্রযাত্রার পথে এটি একটি অশনি সঙ্কেত বলে মন্তব্য করেন মাইলাম।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোসাংবাদিক ড. শহীদুল আলমকে আটকে রাখার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্যারমেন বলেন, তিন মাস ধরে ড. শহীদুল আলমের মতো খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিককে আটক করে রাখা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা একটি সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজে চিন্তাও করা যায় না।

সম্প্রতি সৌদি কন্স্যুলেটে বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে তার ব্যক্তিগত বন্ধু উল্লেখ করে শ্যারমেন বলেন, শাসকশ্রেণী কতটা ভয়নাক হলে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অগণতান্ত্রিক নীতির সমালোচনা করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান এবং অনতিবিলম্বে ফটো সাংবাদিক ড. শহীদুল আলমের মুক্তি দাবি করেন।

রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জাতিসঙ্ঘের বার্মাবিষয়ক টাস্কফোর্স প্রধান এডেম ক্যারল বলেন, মুসলিম জাতিগত নিধনে মিয়ানমার সরকার যে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। তিনি বলেন, ইসলাম ফোবিয়াকে সামনে এনে তারা পশ্চিমা শক্তিকে এই অপকর্মে কাছে টানতে চেয়েছিল। কিন্তু কেবলমাত্র চীনের সহযোগিতা ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। নৃশংস এসব হত্যাযজ্ঞ বিশ্ববিবেককে নাড়া দিলেও নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে স্পর্শ করতে পারেনি।

সিপিজের আলেয়া ইফতেখার বলেন, মুক্ত মতপ্রকাশের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নি¤œমুখী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সরকার সমর্থক কর্মীবাহিনীদের হাতে সাংবাদিকেরা নির্যাতিত হচ্ছেন উল্লেখ করে সিপিজের এই কর্মকর্তা বলেন, একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের সব পথকে রুদ্ধ করে দিতে চায় দেশটির সরকার।
তিনি বলেন, ড. শহীদুল আলমের জামিন পাবার সব ধরনের ক্ষেত্র থাকার পরও সরকারের ইশারায় তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারা হেফাজতে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সিপিজে সাংবাদিক নির্যাতনের সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছে বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক প্রেস ফ্রিডম কমিটির সদস্য মুশফিকুল বলেন, অমানবিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়ে তিন মাস ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন দেশে-বিদেশে স্বনামধন্য ফটোসাংবাদিক ড. শহীদুল আলম। তাকে মেরে রক্তমাখা জামা ধুইয়ে সেটি আবার পরানো হয়েছে বলে আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন শহীদুল।
জাতিসঙ্ঘের এই স্থায়ী সংবাদদাতা বলেন, কেবল সাংবাদিকই নয় সব বিরোধীমতকে দমন করতে অব্যাহত স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে শাসকশ্রেণী। তার সর্বশেষ সংস্করণ ডিজিটাল অ্যাক্ট নামের একটি কালো আইন। এ আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশকে। শেখ হাসিনা আবারো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর। তার এই অনৈতিক অভিপ্রায় বাস্তবায়ন হতে দেয়া যাবে না বলে মত দেন তিনি।

বিডিপিএএনএ সাধারণ সম্পাদক ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তানভীর নেওয়াজ বলেন, দেশে দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বর্বরতম উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন ক্যারিয়ার সাংবাদিককে তার নিজ দেশের কন্স্যুলেটের ভেতরে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বলকারী সাংবাদিক ড. শহীদুল আলমকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ক্ষমতার ধারাবাহিকতার পথ মসৃণ করতেই স্বৈরাচারী শাসকেরা একের পর এক মিডিয়াকর্মীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।