সৌরভ শর্মা

গাড়ি থেকে নামতেই কেন জানি স্নায়ুচাপ বেড়ে গেল।অচেনা পরিবেশ, নতুন ইউনিভার্সিটি। মনে সাহস আনার জন্য জোরপূর্বক ভাবতে লাগলাম আমি ও তো এখন ১৮+। আরেক সমস্যা, ক্লাসরুম খোঁজে পাচ্ছি না।বুঝতে পারলাম ১৮+ চিন্তা করে বড়জোর মনে সাহস আনা যায়, ক্লাসরুম খোঁজা যায়না। বিপদে এক স্কুল লাইফের শয়তান বন্ধুর দেখা পেলাম।যদিও সে সুসময়ের বন্ধু ছিলনা।
– আরে তারেক, তুই এখানে?
আগে বল, তুই এখানে কি?
-আমি তো এখানেই ভর্তি হয়েছি। তুই ও কি এখানে…..
হুম,কেন?
-তাহলে আগে আমাকে ক্লাসরুম খোঁজে দে।
কোন সাবজেক্ট?
-অর্থনীতি।
আরে চিন্তা করিস না আমি ও একই সাবজেক্টে।তো এতদিন পর কেন?
-আরে না, এমনি।
দোস্ত,স্যার আসছে সালাম দে, সালাম দে।
-অাসসালাম ওয়ালাইকুম।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
-কোন ডিপার্টমেন্টের স্যার?
আরে আমাদের ডিপার্টমেন্টের।
-চল এবার ক্লাসে যাই।
চল।

-আরে স্যার না!
হুম।
-তো উনি শেষের বেঞ্চে কি খোঁজেন?
হা হা হা হা।
-হাঁসছিস কেন?
আরে বলদ উনি আমাদেরই ক্লাসমেট।খালি বয়স একটু বেশি। নাম দীন দয়াল মিত্র সবাই ওনাকে “ডোনাদা “বলে ডাকে।
-তুই সেই শয়তানই থেকে গেলি।
হুম।

– ভীষণ দেরি হয়ে গেছে আজ না জানি স্যার কি বলে?এইসব চিন্তা করতে করতে ক্লাসের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি ডোনাদা।
-অ ডোনাদা, দাঁড়াও দাঁড়াও।
দৌঁড়াচ্ছ কেন?
-ক্লাস তো শুরু হয়ে গেছে।
আরে ধুর, আজ তো প্রথম পিরিয়ড় নাই।
-তাই নাকি?
হুম।
-তাইলে দাদা সরি।
কেন?
-আরে ঐদিন যে সালাম দিছিলাম।
হা হা হা। আরে কোন ব্যাপার না। ওরা আমার সাথে একটু মজা করে।
-আচ্ছা ডোনাদা, তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
বউটা ছাড়া সবাই আছে।
– হা হা হা। আগে গার্লফ্রেন্ড জোগাড় কর। তারপরেই তো তাকে বউ বানাবে।
ভাল প্রস্তাব। ক্লাসে চল।

দিনের বেশির ভাগ সময়ই ডোনাদার সাথে থাকি। ক্লাস,প্রাইভেট আর সময় পেলে ঘুরাঘুরি করি।
একদিন বাসস্ট্যান্ড দিয়ে যাচ্ছি। দাদা তো দেখি হা করে থাকিয়ে আছে।
-দাদা,কি হল?
আরে তোর বৌদি।
-আমার তো কোন বড় ভাই নাই।
আমি কি তোর ছোট নাকি?
-তাই বল।
কি, সুন্দর আছে?
-জাক্কাস।
চল্ চল্ চল্।
-দাদা, মাইর মাইর মাইর। দেখ সাথে কে জানি আছে।
তাইতো।
-আচ্ছা,তুমিতো হিন্দু। মেয়েটা যদি হিন্দু না হয়?
ভাল বলেছিস। তবে যদি হিন্দু হয় মেয়েটাকে আমি ছাড়ছি না।
-দাদা,মেয়েটা হিন্দু।
কীভাবে বুঝলি?
-হাতে কি আছে দেখো।
Yah hoo! আচ্ছা, মেয়েটার এফবি আইডি কীভাবে পাব?
-আমি কি জানি?
আরে তুই তো আছিস।
-না দাদা,আমি পারবনা। আমি মেয়েদের তাপ্পড়কে খুব ভয় পাই।
তুই না আমাকে দাদা ডাকিস?
-হুম।
তো তুই আমার জন্য এইটুকু করতে পারবিনা?
-না পারবনা ।
তোর বড়ভাই হলে এইরকম করতে পারতি?
-পারতাম মানে। সাথে গালি বোনাস দিতাম।
দেখ,প্লিজ আমি তোর কাছে আর জীবনে কিচ্ছু চাইবনা। আমাকে শুধু ওর এফবি আইডিটা কালেক্ট করে দে। এই একাকীত্ব জীবন থেকে মুক্ত কর।
-আচ্ছা ঠিক আছে। দেখি কি করা যায়।
খবর নিয়ে জানতে পারলাম। মেয়েটি আমার কাজিনের বান্ধবী। কাজিন থেকে তার এফ বি আইডি নিয়ে দাদাকে দিলাম।
-দাদা,এবার বার্গার খাওয়াও।
বার্গার না, আমি তোর মাথায় হাত রেখে শপথ করছি ওকে যদি আমি পটাতে পারি, তাহলে তোকে ছাড়া আমি বিয়ের পিঁড়িতেও বসবনা।
-চল এবার বার্গার খাই।
অাজ আইসক্রীম, বার্গার অন্যদিন।

টানা নয়দিন পর ডোনাদার সাথে দেখা। দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম।
-দাদা,কতদূর এগুলো? বৌদির কি অবস্হা?
আজ আমাদের রিলেশনের ৩য় দিন।
কেমনে?
-তা তোর না জানলে ও চলবে।
বর্তমানে আমি চট্টগ্রামে আর ডোনাদা ঢাকায়। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়। এখনো নাকি রিলেশনটা আছে। ঘোরের মধ্যে শপথের কথাও বলে।
কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ার কোনটাতে ডোকা হয়না। আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। ইমুতে ডুকেই দেখলাম বিয়ের কার্ড। ওমা! মানুষ আজকাল ইমুতেও বিয়ের ইনভাইট করে নাকি? যাক দেখি বলির পাঁঠাটা কে?
বর:দীন দয়াল মিত্র(ডোনা)।
ওমা! এ তো দেখি ডোনাদা।
তাহলে শেষমেষ বিয়েটা খেতে পারব। কবে দেখিতো।
শুভ বিবাহ:৭ডিসেম্বর ২০১৭ ইংরেজী। রোজ:শুক্রবার
শুভলগ্ন: ৮:০১ মিনিট।
তারিখ বার সবই ঠিক আছে। শুধুমাত্র বিয়ের লগ্নটাই পেরিয়ে গেল। এখন ১০:৩৭।