বিশেষ প্রতিবেদক:
সম্প্রতি নানা কারণে আলোচিত ও সমালোচিত কক্সবাজার সদর উপজেলা এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দীনকে রাঙামাটির জোছড়ি উপজেলায় বদলি করেছে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। তার এই বদলী শাস্তিমূলক বলে জানা গেছে।

জানা যায়, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাজিম উদ্দিন যোগদান করার পর অল্প ক’দিন কার্যক্রম ভালো দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনি। উচ্ছেদ অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে বড় অংকের উৎকোচ আদায়, অভিযানে নারী পুরুষের গায়ে হাত তোলা, অফিসে সেবাপ্রার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, সাধারণ মানুষসহ নানা শ্রেণী পেশার লোকজনকে মিথ্যা অজুহাতে নাজেহাল করা এবং ভূমিদস্যুদের সাথে আঁতাত করে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত বিভিন্ন পয়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বেদখল ও বহুতল ভবনসহ নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা নয়, সাবেক জেলা প্রশাসক আলী হোসেন ও এসিল্যান্ডের সময়ে উমেদার মুক্ত হলেও বর্তমানে উমেদারের রাজত্ব চলছে সদর ভূমি অফিসে।

অভিযোগ রয়েছে, ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অনৈতিক কাজে তাদেরকে ব্যবহার করার জন্য অবৈধ এ লোকজন অফিসে রেখেছে। এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা তথ্য চাইতে গেলেই নাজাহাল ও হয়রানি করার অভিযোগ ছিলো। এতে চরম অসহায় হয়ে পড়েছে সেবা প্রার্থীরা।

এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর লিখিত অভিযোগ করে বিভিন্ন ভুক্তভোগি নারী পুরুষ। তখন জেলা প্রশাসক অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ^াস দেন ভুক্তভোগীদের। এর প্রেক্ষিতে তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়ে বলে জানা গেচে।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শফিক অভিযোগ করে জানান, কিছু দিন পূর্বে তাদের একটি সংগঠনের ভূমি সংক্রান্ত কাজ নিয়ে সদর ভূমি অফিসে যান। তখন এসিল্যান্ডকে স্যার সম্বোধন না করায় এবং সৈকতের কবিতা চত্বরে অবৈধ স্থাপনা গড়তে না দেওয়াসহ নানা মিথ্যা অভিযোগে তাকে নাজাহাল ও হেনস্তা করে। পরে তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি অভিযোগ করেন তিনি। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠে।

কৃষকলীগ এর জেলা দপ্তর সম্পাদক ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এর সদর উপজেলার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেন বলেন, “স্যার” সম্বোধন না করাতেই একইভাবে গত একসাপ্তাহ পূর্বে আমাকেও আমার বাপের সামনে নাজাহাল ও হেনস্তাকরেন এ কর্তা। অফিস থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছি”। আমি এ অজনবান্ধব ও ক্ষমতার অপব্যবহাকারী অফিসারের বিচার দাবী করছি।

শুধু তা নয় কিছু দিন কক্সবাজারের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে অহেতুক ধরে এনে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন এই কর্মকর্তা। এভাবে তার কাছে বিভিন্ন ভূমি সেবা প্রার্থীরা গালমন্দ থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানির শিকার ও অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রায়স।

এদিকে শহরের কবরস্থান পাড়ার বাসিন্দা বিধবা খুরশিদা অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৩ এপ্রিল ১৮ ইং তারিখে রশিদ উদ্দিন আহমদ, সহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন লোক এসে সদর এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিনর নামে টাকা চায় এবং দেখা করতে বলে। আমি বিধবা অসহায়, গরীব নারী হওয়ায় টাকা না দিতে পারায় ও দেখা করতে না যাওয়ায় ৫ এপ্রিল ১৮ইং নাজিম উদ্দিন দলবল নিয়ে আমার বসত বাড়ী উচ্ছেদের নামে ভাংচুর চালায়। তখন আমাকে ও আমার মেয়েদেরকে মারধর করে হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কাগজটি মুখের মধ্যে ছুঁড়ে মারে। পরে চুল ধরে গাড়ীতে তুলে ভূমি অফিসে নিয়ে গিয়ে ২ঘন্টা আটক করে রাখে। বিভিন্ন মামলার ভয় ভীতি দেখিয়ে কাগজে সই নিয়ে চালান করে দেবে বলে হুমকি দিয়ে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। পরে হাত পা ধরে ১লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিতে আমাকে বাধ্য করে এবং ছেড়ে দেয়। আর আসার সময় বলে একথা কাউকে জানালে তোমাকে তোমার ছেলে মেয়েদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাবো।’

শুধু একর্তা সেখানে ক্ষান্ত হননি, বিধবা বলে এ ঘটনায় আমাকে পরামর্শ দেওয়ায় আমার এক আত্মীয় কৃষকলীগের নেতা ও পিএমখালীর বাসিন্দা আমির হামজা নামের এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৯ মাসের কারাদন্ড দেয় নাজিম উদ্দিন। বিষয়টি তখন বিভাগীয় কমিশনা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনকে লিখিত অভিযোগ করি।
আমির হামজার ছেলে আজাদ অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু মাত্র ভুক্তভোগি বিধবা এক নারীকে পরমর্শ দেওয়ায় আমার বৃদ্ধা বাবাকে ১৯ মাসের জেল দেন এই কর্তা। যার কারণে আমার মা স্ট্রোক পর্যন্ত করেছিল। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এই কর্তার বিচার দাবী জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাক মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘উল্লেখিত ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে বদলি করা হলো।’