কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া:
ইয়াবা সেবন, পাচার ও বাজারজাতকরন প্রতিরোধে সরকার জিরো ট্রলারেন্সে অবস্থান নিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে দেশব্যাপী সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখলেও উখিয়ায় তার কোন প্রভাব পড়েনি। ইয়াবা পাচারকারীদের বেপরোয়া চালচালন আগের নিয়মেই রয়ে গেছে। ফলে এখানে মাদক সেবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক সেবনে টাকা জোগান দিতে গিয়ে অবাধ্য ছেলেরা মা বাবা পরিবার পরিজনের উপর হাত তোলতে দ্বিধাবোধ করছে না। সাজানো গোছানো সংসার তছনছ হয়ে যাচ্ছে। মাদক সেবী স্বামীর পৈচাষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে আদালত ও থানার আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

পাশাপাশি বেড়েছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে রক্তক্ষয় সংঘর্ষের ঘটনা। এ কথার সত্যতা স্বীকার করে উখিয়ার সহকারী কমিশনার ভুমি একরামুল ছিদ্দিক জানান, গত এক মাসে ১৭৭ জন মাদক সেবীকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক আন্দোলন ছাড়া মাদকের আগ্রাসন থামানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

শুক্রবার সকালে থানা সড়কের পাশে বসে কাঁদছে আহত বয়োবৃদ্ধ মাতা ফাতেমা বেগম (৪০) ও তার ছেলে বুকে আঘাত নিয়ে কাতরাচ্ছে আকতার হোসেন (১৬)। জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, থানায় অভিযোগ করতে এসেছেন। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের খেওয়াছুড়ি গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবুল হাশেম (৫৫) থানায় অভিযোগ করতে এসে সাংবাদিকদের জানান, তার স্কুল পড়–য়া ছেলে আমির হোসেন (১৬) মাদক সেবী বন্ধু মহলের পাল্লায় পড়ে সেও একজন পেশাদার মাদক সেবী হয়ে গেছে। মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য বসতবাড়ীর গৃহপালিত একটি গাভী গরু চুরি করে বিক্রি করেছে। এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সে ধারালো কিরিচ নিয়ে হত্যা করার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। বাধ্য হয়ে থানায় এসেছে তার অবাধ্য ছেলে আমির হোসনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করতে। থাইংখালী ঘোনার পাড়া গ্রামের নবী হোসেন (৪৫) ও তার স্ত্রী আমেনা খাতুন (৪০) থানায় অভিযোগ করে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের হাতে একটি অভিযোগের কপি দিয়ে বলেন, ভাই আমাদের বাচাঁন, আমাদের ছেলে প্রতিরাতে ইয়াবা সেবন করে বাড়ীতে এসে থালা বাসন, আসবাবপত্র ভাংচুর করছে। বলছে টাকা না দিলে দু,জনকে হত্যা করে বাড়ী ভিঠা বিক্রি করে দেওয়া হবে। এসময় ছোট ছেলে নুরুল ইসলাম (১২) প্রতিবাদ করলে তাকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়ে গুরুতর আহত করে। এভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মাদক সেবীর অভিযোগ থানায় আসছে।

মনখালী গ্রামের ছৈয়দুল করিম জানান, তার একটি মাত্র ছেলে নুরুল ইসলামকে গত বছর ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তাদের সংসারে একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু রয়েছে। তার ছেলে কোন কাজ কর্ম করেনা। দিনরাত ইয়াবা সেবন করে তার স্ত্রীকে মারধর করে। গত এক সপ্তাহে আগে তার স্ত্রী নুর নাহার বেগম (২২) বাপের বাড়ীতে চলে গেছে। এঘটনা নিয়ে নুর নাহারের বাবা আমির হোসেন তাকেও আসামী করে থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা করেছে।

এভাবে অহরহ মাদক সেবীর অভিযোগ থানায় আসছে বলে স্বীকার করে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুজ্জামান জানান, মাদক সেবীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গিয়ে পুলিশ কে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গত এক মাসে এজাহার নামিয় মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা হয়েছে প্রায় ২০টির মত। বাকবাকী মাদক সেবীদের ভ্রাম্যমান আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।