ডেস্ক নিউজ:
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে। কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও নাশকতার মামলা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এসব মামলা ও গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক বলে দাবি করা হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদে জানা গেছে এসব তথ্য। কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালতে জামিন আবেদন জানালে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম) এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডা. শাহাদাত হোসেনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী। তিনি জানান, বিভিন্ন মামলায় জামিনের জন্য ডা. শাহাদাত ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তারের খবর চট্টগ্রামে ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীদের মধ্যে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে পুলিশ নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় মহানগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন ঘিরে রাখে রাত পর্যন্ত।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করেছে বিএনপি নেতা তাজুল ইসলামকে। তিনি নাঙ্গলকোট পৌর বিএনপির নেতা।

মাদারীপুরের কালকিনিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বিএনপির দুই নেতাকে। গতকাল সকালে তাঁদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উপজেলা তৃণমূল দলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল হাওলাদার ও ডাসার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ইমরান।

সরকারি কাজে বাধা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৭ নেতাকর্মী গতকাল স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ীর জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এ আদেশ দেন। এর আগে আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন।

সিলেটে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার এই নেতাকর্মীরা জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আসামিরা জালালাবাদ থানার একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। মেয়াদ শেষে গতকাল তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন প্রমুখ।

ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও নাশকতা আইনে ২৪১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে আসামিদের বাড়িতে হানা দিয়ে তিনজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন কুল্লা ইউনিয়নের খাতরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, চন্দ্রাইলের বদির হোসেন ও শরীফবাগ এলাকার আবু তাহের। মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিনসহ ৯১ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্র জানায়।

ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা জানান, নাশকতা পরিকল্পনায় জড়িত থাকায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় গত এক সপ্তাহে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভালুকা মডেল থানার এসআই জীবন চন্দ্র বর্মণ ও এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে গত শুক্রবার এবং সোমবার তিনটি মামলা দায়ের করেন। আসামি করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু, সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবদল সভাপতি তারেক উল্যাহ চৌধুরীসহ ৬৫ জনকে। অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০-৩৫ জন আসামি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি মামলাতে পৃথকভাবে আসামি রয়েছেন বিএনপির প্রায় ১০০ নেতাকর্মী।

নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ১৫৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ও ফতুল্লার মুন্সিখোলা এলাকা থেকে দুটি বাসসহ আসামিদের আটক করা হয়। গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, যুবদল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, ফতুল্লা থানার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাব্বানী, মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি হাজী সুলতান আহম্মেদ প্রমুখ। তিনটি মামলাতেই ককটেলের অংশবিশেষ ও ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার দেখানো হয়েছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক দুলাল, ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক শাহীন আলম, আমজাদ হোসেন, চাঁন মিয়া ও বাদশা মিয়া নামের কর্মী। গতকাল বিকেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজশাহীর তানোর থানার একটি নাশকতার মামলায় মুণ্ডুমালা পৌর জামায়াতের আমির আনিছুল রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মুণ্ডুমালা বাজারের নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম জানান, ৬ ফেব্রুয়ারি একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুটি ককটেলসহ মেহেদি নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলার আসামি আনিছুল।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আজিজুর রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস জানান, আজিজুর রহমান দলীয় লোকজন নিয়ে কালো পতাকা মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সংবাদে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ দেখে কর্মীরা পালিয়ে যায়।

নরসিংদীতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টারসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় শহরের চিনিশপুর এলাকায় জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার সভাপতি খায়রুল কবীর খোকন বলেন, তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। কোনো মামলা ছাড়াই তাঁকে আটক করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মো. সৈয়দুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে মামলা রয়েছে।