ডেস্ক নিউজ:
দ্বিতীয় দফার সংলাপেও আশানরুপ ফল পায়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ক্ষমতাসীন দলের দাবী, সময় আরো বাকী আছে, সংলাপ হয়তো আর হবে না তবে আলোচনার দরজা খোলা আছে। যেকোন সময় বসা যেতে পারে।

ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি, আলোচনা ও আন্দোলন একসাথেই চলবে। তারা একগুয়েমি ছাড়েনি। তবে আরো আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আলোচনার সুযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আলোচনা আরও হতে পারে তবে ‘ডায়লোগ’ শেষ।

তবে ঐক্যফ্রন্ট তফসিল ঘোষণার আগেই কিছু দাবি মেনে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। ওইসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দল। এ প্রসঙ্গে কাদের বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে এটা তাদের বাহানা। কিন্তু আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। গত সাত দিনে যত সংলাপ হয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সংসদ যেদিন বসেছে সেদিন থেকে হিসেব করে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তারা সংলাপে প্রস্তাব দিয়েছেন নির্বাচন সংসদের মেয়াদ শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে করার। কিন্তু এটা সংবিধানের বাইরে। তাই আমরা এতে সম্মত হইনি। আর একজন প্রধান উপদেষ্টাসহ ১০ জন উপদেষ্টা রেখে নির্বাচন করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের অনুরোধ করেছেন, আপনারা নির্বাচনে আসুন, আমরা দেখিয়ে দেবো এই সরকারের অধীনেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এরপর যদি আপনারা জিতেন আপনারা ক্ষমতায় আসবেন, আর আমরা জিতলে আমরা আসবো।

তবে তাদের সাত দফায় থাকা বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হবে না, দলীয় পতাকা থাকবে। কোনও ধরণের সরকারি ফ্যাসিলিটি (সুবিধা) আমরা এনজয় করবো না। তখন সব কিছু থাকবে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার আহ্বান মেনে নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেছেন, এটা এখন কোথাও থাকে না। তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন থাকবে। তারা নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।

সাত দফার কী কী দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের ব্যাপারে আমরা সম্মত। সরকারি পতাকা ও সরকারি কোনও ফ্যাসিলিটি আমরা এনজয় করবো না। তারা রাজবন্দিদের একটা তালিকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে বলেছেন, যদি এই তালিকায় রাজবন্দি কেউ থেকে থাকে তাহলে তাদের মুক্তি দিয়ে দিতে। তারা সভা সমাবেশ করতে পারবেন। বিদেশি পর্যবেক্ষকের ব্যাপারে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।

আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের সিনিয়র নেতাদের সাথে পারসোনালি আলোচনা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। নির্বাচন পেছানোর নামে কোনও অপশক্তি আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে বিষয়েও সবাইকে লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর ব্যাপারে কথা হয়েছে। তারা তাদের মুক্তি চাননি, জামিন চেয়েছেন।

আমরা বলেছি, এই মামলটি করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ক্যালেন্ডারে দেখতে দেখতে ১১ বছর পার হয়েছে। এই মামলা নিষ্পত্তি করতে ১১ বছর পার হয়েছে। তারা এ মামলা নিষ্পত্তি করতে আগ্রহী ছিলেন না। এখন আদালত যদি জামিন দেয় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সরকারের দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হয়। টানা তিন ঘণ্টার এই সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা এবং ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. ‌মোশাররফ হো‌সেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ‌মোস্তফা মহ‌সিন মন্টু, দলের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত ‌চৌধু‌রী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দলের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

সংলাপে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডা. দীপু মণি, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, স ম রেজাউল করিম, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু।

প্রসঙ্গত, অক্টোবরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর তাদের আহ্বানে গত ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দলের প্রথম দফা সংলাপে অংশ নেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

সংলাপে সমঝোতার লক্ষ্যে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনীকালীন সরকারে ঐক্যফ্রন্ট থেকে স্বরাষ্ট্রসহ চারমন্ত্রী, তফসিল ঘোষণা পেছানো এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধ।