বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর গুলিতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ স্ত্রী মারা যান। এর আগে শুক্রবার সকালে পৌরসভার পশ্চিম পাহাড়তলীস্থ হালিমাঘোনা এলাকার ভাড়া বাড়িতেই তাকে গুলি করে পাষন্ড স্বামী। নিহত রোজিনা আক্তার (২৮) শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাহাড়তলীস্থ হালিমাঘোনা এলাকার ভাড়াটিয়া মো. শফির মেয়ে। ঘাতক স্বামী মোহাম্মদ শফি স্থানীয় ইছুলুরঘোনা এলাকার আব্দুল হাকিম মাঝির ছেলে, বর্তমানে হালিমা পাড়ার বাসিন্দা। দাম্পত্য জীবনের তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আর রোজিনা ছাড়াও শফির আরো দুইটি স্ত্রী রয়েছে।
রোজিনার পিতা মো. শফি জানান, গত ৬-৭ বছর পূর্বে রোজিনা এবং শফি পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর এক বছর পর্যন্ত তাদের সুখের সংসার ছিল। এ সময়ে তাদের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। এরপর দিনযত যাচ্ছিল ততই তাদের সংসারের কারণে-অকারণে নানা কলহ লেগে থাকতো। এরই ভেতর তার স্বামী শফি আরো বিয়ে করে। এ নিয়ে কলহ চরমপর্যায়ে পৌছালে ২ বছর আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু ইত্যবসরে শফি ও রোজিনার মাঝে আবার যোগাযোগ ঘটে। ফলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সম্প্রতি হালিমাঘোনা মসজিদের ইমাম তাদের পুনরায় বিয়ে পড়ান। এরপর শফি রোজিনার বাসায় যেত প্রায় সময়। শুক্রবার রাতেও শফি বাসায় গেলে কি কারণে তাদের মাঝে কলহ জন্ম নেয় জানা যায়নি। কিন্তু সকালে শফি রোজিনাকে পর পর কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, রোজিনাকে উদ্ধার করে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে তাকে চমেক হাসপাতালে না নিয়ে কক্সবাজারের একটি বেসরকারী হাপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অপারেশন করে তার শরীরে বিদ্ধ গুলি বের করে সেখানেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোজিনা শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান।
কক্সবাজার পৌরসভার স্থানীয় (৭ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদের পর মাসিক খোরাকসহ নানা বিষয় নিয়ে শফি-রোজিনার শালিসটি আমিই করেছিলাম। বাচ্চার মাসিক খরচটা নিয়মিত দেয়ার সিদ্ধান্তে শালিস সমাধান হয়। এরপরও কেন কলহ হলো এবং কিভাবে শফি আবার রোজিনার বাসায় আসা-যাওয়া করল ঠিক জানা নেই। তবে শফি গুলি করেছে এ বিষয়টি জেনেছি। রোজিনারা অতিদরিদ্র।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অপরাধ জগতের সাথে শফির যোগাযোগ দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে। তার কাছে অবৈধ একাধিক অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসার সাথেও তার সম্পৃক্ততা হয়। যার সুবাধে বিয়ে করে কয়েকটি। আর প্রশাসন ম্যানেজ করতে স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় ‘খরচা’ দেন। হাতে রেখেছেন প্রভাবশালী বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কয়েকজন প্রতিনিধিকে। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে নির্বিঘ্ন ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছিলেন তিনি। আর সবাইকে বোকা বানাতে বছর খানেক আগে তাবলীগ জামাতে গিয়ে ফেরার পর মুখভর্তি দাড়ি রেখে সাধুর বেশে চলাচল শুরু করেন। কিন্তু রোজিনা হত্যার ঘটনায় প্রমাণ করে দিয়েছে তিনি বেশ ধরে অপকর্ম আড়ালের চেষ্টা করতেন, এমনটি ধারণা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সচেতন মহলের।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্বামীর গুলিতে স্ত্রী নিহতের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে হালিমাপাড়ায় এসেছি। বিষয়টা গুরুত্ব সহকারে তদারক করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যাকারিকে ধরার চেষ্টা চলছে। মরদেহটি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।