সিবিএন ডেস্ক:
চরম অনিয়ম দুর্নীতি আর কতিপয় কর্মকর্তাদের কারনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিয়া নগরের এই বৃহৎ ক্রীড়া প্রতিষ্টান উদ্বোধন করলেও তা এখনো পূর্নতা পায় নি । এখনো একটি গ্যালারী ছাড়া বাকি কোন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। যার কারনে এখনো পরিপূর্ণ কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়ায় নি কক্সবাজারের এই মাঠে। এদিকে বয়স ভিত্তিক কিছু আর্ন্তজাতিক ম্যাচ এবং দেশিয় ক্রিকেটের বেশ কিছু খেলাকে ঘিরে দেওয়া বাজেটের বেশির ভাগই লুটপাট হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া শুরুর দিকে করা বিপুল টাকার উন্নয়নের বেশির ভাগ নস্ট হয়ো গেছে। এছাড়া মাঠ সংস্কার সহ নানান কাজে ভূয়া বিল ভাউচার করে বিপুল টাকা আত্বসাৎ করছে ভ্যানু কর্ডিনেটর সহ কতিপয় কর্মকর্তা।
কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের ভ্যানু কর্ডিনেটর আহসানুল হক বাহার বলেন,অনেক আশা নিয়ে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী এই কক্সবাজারে শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম ও ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তুলা হলেও এখনো পর্যন্ত আমরা কোন পরিপূর্ন আর্ন্তজাতিক ম্যাচ পায় নি। তবে বয়স ভিত্তিক অনেক আর্ন্তজাতিক ম্যাচএখানে আয়োজন করা হয়েছে এবং দেশিয় ক্রিকেটের সব খেলা এই মাঠে হয়েছে। তিনি বলেন যদি অবকাঠামো গত কিছু উন্নয়ন করা গেলে এবং মাঠ সংস্কার করা হলে আর্ন্তজাতিক ম্যাচ আয়োজন সম্বব। কারন এখানে ৩ টি গ্রাউন্ড আছে,এবং ৩৬ টি পিচ আছে যা দেশে আর কোথাও নেই। এখানে বিসিবি কতৃক ২২ জন কর্মচারী নিয়মিত কাজ করে জানালোও বছরে কি পরিমান বাজেট বরাদ্ধ আসে বা মাঠ সংস্কারে কি পরিমান বাজেট আসে তা জানাতে অস্বিকৃতি জানান তিনি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অনিয়ম দূর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিনত হয়েছে এখন শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম। মাঠ সংস্কারের নামে বাইরে থেকে লেবার এনে বিপুল টাকা এবং গাড়ীর খরচ,তেল ও মেরামত বাবদ কোটি টাকার ভুয়া বিল ভাউচার করে আত্বসাৎ করছে ভ্যানু কর্ডিনেটর সহ কতিপয় কর্মকর্তা এবং তার হিস্যা ঢাকা পর্যন্ত পৌছে বলে জানা গেছে।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়ার পর মাঠের প্রধান ফটকের পাশে চেঞ্জিং রুম এবং আনসার ক্যাম্প সহ কিছু ঘেরাবেড়া দেওয়া হয়েছিল সেখানে অন্তত অর্ধকোটি টাকা ব্যায় করা হয়েছে। কিন্তু ৫ বছরের মাথায় সেই সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কোন চিহ্নই নেই। সব কিছু ভেঙ্গে গেছে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন প্রকল্প।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন কর্মচারী জানান, এখানে সরকারি টাকা লুটপাটের মহোৎসব চলছে, একবার ঘাষ কাটলে ৩ বার বিল করা হয়, জঙ্গল পরিষ্কারের নামেও হয় ভুয়া বিল ভাউচার এবং বিভিন্ন খেলার সময় সাংবাদিকদের আপ্যায়নের জন্য একটি বাজেট অবশ্যই থাকে কিন্তু কোন সময় সাংবাদিকদের আপ্যায়ন করানো হয় না। মাঝে মধ্যে নাস্তা দেওয়া হলে ও তার গুনগত মান খুবই বাজে। আবার এখানে কোন খেলা হলে বিসিবির পাসকার্ড বা নানান ধরনের জটিলতা দেখিলে সাংবাদিকদের আসতে দেওয়া হয় না। কারন সাংবাদিক আসলে তাদের দুপুরের খাবার সহ নাস্তা দিতে হবে সেখানে টাকা খরচ হবে সে জন্য ভ্যানু কর্ডিনেটর সাংবাদিকরা যাতে না আসে সে চেষ্টায় থাকে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সম্পাদক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বলেন, জেলা ক্রিকেট লীগ বা বড় কোন আয়োজনের সময় আমরা অনেক চেস্টা করেও কোন সময় শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের মাঠ পায় নি। শুধু গতবার প্রিমিয়ার লীগের ফাইনাল খেলার সময় অনেক চেষ্টা তদবির করে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলাম। শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ষ্টেডিয়াম মাঠ কক্সবাজারে হলেও কক্সবাজারের ক্রিকেটার বা খেলোয়াড়দের কোন কাজে আসে না। তারা শুধু দূর থেকে দেখতে পারে এবং সেখানকার দায়িত্বে থাকে সব সময় বিসিবির কর্তকর্তারা। সে জন্য আমাদের কিছু করার থাকে না।
এ ব্যপারে বিসিবির ম্যানেজার সৈয়দ আবদুল বাতেন জানান,২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করলেও কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের এখনো অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার আছে। বিশেষ করে গ্যালারী সহ আরো বেশ কিছু কাজ আছে আশা করছি আগামী জাতিয় নির্বাচনের পরে বাকি কাজ শুরু হবে। তবে বাজেট বা আর্থিক বিষয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
এদিকে কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ন সম্পাদকও বিসিবির কাউন্সিলার মাহমুদুল করিম মাদু বলেন,আমার জানা মতে ১৫৪ কোটি টাকার বাজেট হয়েছিল কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের জন্য। কিন্তু কি কারনে সেই টাকা আসছে না বা কাজ হচ্ছে না সেটা বলতে পারি না। আর স্থানীয় পর্যায়ে কিছু অনিয়ম থাকলে সেটা আমাদের জানালে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিতে পারি।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু জানান, শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ষ্টেডিয়ামের ৪৯ একর জমি ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্ত সে অনুযায়ী আমাদের কাজ সেখানে থাকে না। তবে মাঝে মধ্যে অনুষ্ঠান হলে দাওয়াত দেয়।
এদিকে জেলার সর্বস্তরের ক্রীড়ামোদিদের দাবি শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের ভেতরে বাইর সব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করে এবং বাকি কাজ সমাপ্ত করে একটি পরিপূর্ণ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম গড়ে তোলা হউক।