আনোয়ার হোছাইন ঈদগাঁও :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও -ঈদগড়ের বাউ কুল চাষীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে এখন দিশাহারা । চোখের জল আর হতাশায় এখন দিন কাটছে তাদের। বিগত মাসে প্রকৃতির বৈরী আচরণে তারা এ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার সদরের ঈদগাঁও ও রামু’র ঈদগড়ের বাউ কুল চাষীরা চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাউ কুল উৎপাদনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় প্রতি মৌসুমের মতো বাউ কুল বাগান গুলোতে কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।এরমধ্যে অধিকাংশ বিনিয়োগের টাকা ধারের । বাউ কুল চাষী ও কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে শতাধিক একর বাগানে আশানুরুপ মুকুল ও পরবর্তীতে ফল দেখা যায়। এতে তাদের চোখে মুখে আনন্দের বিচ্চুরণ দেখা দেয়।যা তাদের বিগত মৌসুম গুলোর উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে ধারণা করছিল। কিন্তু বিগত মাসে আকস্মিক ভাবে হওয়া টানা বৃষ্টির পর রাতারাতি কুলের মুকুল গুলোর স্বাভাবিক রং পাল্টে যেতে শুরু করে।এতে চাষীরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন কিটনাশক ও ভিটামিন ব্যবহার করে মুকুল ও ফল গুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে ফের কোটি টাকা বিনিয়োগে হাড় ভাঙ্গা ব্যর্থ চেষ্টা চালায় । কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সময় যতই যেতে থাকে, ক্রমই মুকুলের রং পাল্টে যাওয়ার পাশাপাশি ফল গুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। চাষীদের সব চেষ্টা ব্যাহত হয়।

চাষীদের এ দূরাবস্থা জানতে পেরে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসব বাগান পরিদর্শন করে চাষীদের দূর্দশার কথা শোনেন এবং তাদের ঘুরে দাড়াতে আশ্বস্ত করেন । চাষীরা জানান,এ মৌসুমে তাদের ফলনের টার্গেট ছিল ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার । কিন্তু এ বৃষ্টির পর সব বাগান মিলে এক লাখ টাকার কুল উঠে আসে কিনাও সন্দেহ । ইতিমধ্যে এ চরম লোকসানের কারণে কর্মচারী ছাটাইয়ে তারা বাধ্য হয়েছেন।এর ফলে এসব পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছেন বলে জানান। অপরদিকে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি থেকে যে পরিমাণ টাকা ধার নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকরা জানান, তারা ২০০৯ সাল থেকে সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শতাধিক একর জায়গার উপর অপহরণ চক্র ও পাহাড়ী ডাকাতদের ঝুকির মধ্যেও এ সম্ভাবনাময়ী বাউ কুল চাষ শুরু করে।এক পর্যায়ে তারা সফলতার মুখও দেখে।আপেল আকৃতির এ বাউকুল এতই সুস্বাদু ও চোখ জুডানো যে ,জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার ফল ব্যবসায়ীরাও তা সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । এতে দ্বিগুণ উৎসাহে চাষীরা তাদের চাষ বৃদ্ধিতে ঝাপিয়ে পড়ে । এ অভাবনীয় বাউ কুল চাষের সংবাদ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া সচিত্র প্রতিবেদন পরিবেশন করে চাষীদের আরেকদফা উৎসাহ যোগায়। এমনকি এ সুস্বাদু বাউ কুল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করার ঝুকিও গ্রহণ করে চলতি মৌসুমে এ সাধারণ চাষীরা । কিন্তু প্রকৃতির বৈরী আচরণে তাদের সে টার্গেট মুখ থুবড়ে পড়ে । চাষীরা তাদের বিনিয়োগ হারিয়ে এখন সর্বশ্বান্ত।সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্টান এসব চাষীদের পাশে না দাড়ালে সম্ভাবনাময়ী এ চাষ চরম ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে শংকা প্রকাশ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা।

চাষীদের মধ্যে রামু’র ঈদগড় ছুয়ারি কাটার “আল্লাহর দান বহুমুখী কৃষি খামারের” মালিক ঈদগাঁও’র রহিম উল্লাহর সাথে কথা হলে জানান,বিগত ২০০৯ সাল থেকে তারা উপজেলা ও জেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জীবনের ঝুকি নিয়ে নিজের অর্জিত সর্বস্ব অর্থ দিয়ে এ বাউ কুল চাষ শুরু করে।তার সাথে অন্য যে সব চাষী এ ঝুঁকি পূর্ণ চাষ শুরু করেন, তারা হল,মেম্বার নুরুল আলম,মৌ: ঈসহাক,মেম্বার টুলু, মেম্বার মিনার,শাহ আলম,আবদুল গণি,দীল মোহাম্মদ ,দেলোয়ার ,লিয়াকত,এহছান,আবুল মনছুরসহ আরো কয়েকজন।রহিম উল্লাহ আরো জানান,প্রতি মৌসুমে তার বাগানে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।এ মৌসুমে ফলন বৃদ্ধির আশায় বিনিয়োগও বাড়ান। যথসময়ে গাছে আশানুরুপ মুকুল ও ফলন দেখা যায়। তাই তিনি এবার আশায় বুক বেঁধে ছিলেন বিগত মৌসুমের ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকার উৎপাদন মূল্য এবার অর্ধকোটিতে ছাড়িয়ে যাবে। তার মত অন্যান্য চাষীরাও এ আশার জাল ভূনছিল।কিন্তু শেষ মুহুর্তে প্রকৃতির বিরুপ আচরণের শিকার হয়ে তাদের স্বপ্নের জাল ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে।এখন তাদের চোখের জল আর স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।সর্বশ্বান্ত হয়ে ধারের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চরম উৎকন্টায় দিন পার করছেন। তাই তারা সম্ভবনাময়ী এ চাষকে বাঁচাতে সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্টানের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এলাকার এ সু-স্বাদ কুল পিপাসু লোকজন ও সচেতন জনসাধারণের অভিমত , অপার সম্ভাবনার এ কুল চাষীদের সঙ্গী কি চোখের জল আর হতাশা হবে? না তাদের রক্ষায় সরকার এগিয়ে এসে এ সম্ভাবনাময়ী চাষকে এগিয়ে নেবেন এ প্রশ্ন তাদের । ঈদগড় ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ঐ বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে চাষীরা।যা আমি উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করার পর সংশ্লিষ্ট টিম সরেজমিনে উক্ত বাগান গুলো পরিদর্শন করেছেন। রামু উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আহমদের সাথে কথা হলে জানান,ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহোদয়ের নেতৃত্বে উর্ধতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন । রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মাছুদ ছিদ্দীকির সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন,ক্ষতিগ্রস্থ চাষী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ সংবাদ পেয়ে তিনিসহ একটি সরেজমিনে এসব বাউ কুল বাগানের ক্ষতির চিত্র দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন এবং জেলা সহকারী স্থানীয় সরকার কর্মকর্তাও এ বিষয়ে অবগত। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে কৃষি রিচার্স সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।এ রিপোর্টের আলোকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম অতিসত্বর এসব বাগান পরিদর্শনে আসবেন। ক্ষতিগ্রস্থ এসব চাষীদের জন্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ভূর্তকি বা লোনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, উচ্চ পর্যায়ের টিম পরিদর্শনের পর তাদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে চাষীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আরো বিষদ জানতে জেলা সহকারী স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা শাহরিয়ার মহোদয়ের মোবাইলে কল দিলেও রিসিভ না হওয়া মতামত জানা সম্ভব হয়নি।