এফ এম সুমন, পেকুয়া:

বালুবাহি ভারী নৌঝানের (ট্রলারের) ধাক্কায় ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে গেছে পেকুয়া উপজেলার অন্যতম নৌপথে যোগাযোগের জন্য নির্মিত উজানটিয়ার করিমঁদাদ মিয়ার জেটিঁঘাট। মাতামুহুরী নদীতে নোঙর করা বালুবাহী ভারী নৌযানের ধাক্কায় ঘাটটির অর্ধেক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মাটির উপর অর্ধেকাংশ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন যেকোন মুহুর্তে নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে যেতে পারে বাকি অংশটি।

শুক্রবার ২ অক্টোবর ঘাটের পাশে নোঙর করে বালুবাহি কিশোরগঞ্জের এফবি রফাত আফাত নামের ট্রলারটি। কিন্ত সেই রাতেই মাঝি মাল্লাদের চরম গাফেলতির কারনে মাঝ রাতে ট্রলারটি জেটিঘাঁটে গিয়ে ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে ঘাটের অর্ধেকাংশ ভেঙে ট্রলারের উপরে পড়ে ঘাটটি বিধ্বস্ত হয়। তবে ট্রলারটি আটকে থাকলে ও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এর আগে ও একটি ট্রলারের ধাক্কায় ঘাটের একটি সিড়ি বিলীন হলেও এটি রক্ষায় কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় এলজিইডি অফিস। বরং কিভাবে দ্রুত সময়ে ট্রলার ছাড়া পেয়ে চলে যান তাও জানা নেই কারো। স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারের কোটি টাকার সম্পদ এভাবে বিলীন হওয়ার ব্যপারে কয়েক দফা জানালেও কোন টনক নড়ে না স্থানীয় এলজিইড়ি কার্যালয়ের।

লবণ ও চিংড়ি ব্যবসায়ী উজানটিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরী মিন্টু বলেন, এই করিমদাঁদ মিয়ার ঘাট দিয়ে উজানটিয়ার উৎপাদিত লবন চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এটি অত্যান্ত গুরত্বপূর্ন তার কারন হলো এটি দিয়ে নৌপথে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বদরখালী, করিয়ারদিয়া ও চট্টগ্রামে যাতায়ত করা যায়। তাছাড়াও দেশের অন্যতম কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কাজে লোকজন যাতায়তে এ ঘাট ব্যবহার করছেন।

তিনি আরো জানান, ঘাটটিতে সম্প্রতি সময়ে রক্ষানাবেক্ষনে যথেষ্ট অবহেলা ছিল। এটি রক্ষায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে ও শেষ রক্ষা হলো না। উজানটিয়ার এতো গুরত্বপূর্ন ঘাটটি কেন রক্ষায় এগিয়ে আসলো না কর্তৃপক্ষ তা আমার জানা নাই। আমি মনে করি সরকারের উচিৎ হবে কি কারনে ঘাটটি কিভাবে ধ্বংস হলো তা নিয়ে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেয়া। তা না হলে যারা সরকারী সম্পত্তি নস্ট করলো তারা বিচারের মুওেখামুখি হবেনা। তাপরের ও আশা করবো সরকার যেন আমাদের প্রাণের দাবীটি রক্ষা করেন এই ঘাটটি দ্রুত সংস্কার করেন।

স্থানীয়ভাবে প্রাচীন এই ঘাটটি করিমদাদ মিয়ার ঘাট নামে পরিচিত। জায়গা করে নিয়েছে উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে। সরেজমিনে ঘাটটি পরিদর্শনে দেখা যায়, স্থানীয়রা জানান ১৯৯৫ সালে উজানটিয়া ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ এলজিইডির অর্থায়নে ঘাটটি নির্মাণ করেন। এরপর থেকে মহেশখালী, মাতারবাড়ি, সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দর, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মগনামায় নির্মিতব্য সাবমেরিন নৌঘাঁটি ও করিয়ারদিয়ার মৎস্য প্রজেক্টসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে এই ঘাটটি। সম্প্রতি মাতারবাড়িতে নির্মিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক মালামাল ও দেশী বিদেশী প্রকৌশলীরা সহজে পারাপারে এ ঘাট ব্যবহার করে আসছেন। তাছাড়া করিয়ারদিয়া ও উজানটিয়ায় উৎপাদিত লবন ও মাছ এঘাট দিয়েই নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সাখাওয়াত হোসেন সুজন চৌধুরী জানান, আমাদের চলাচলের খুবই গুরত্বপুর্ণ ঘাটটি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা আমাদের জন্য বড়ই কষ্টের আশা করবো সরকার দ্রুত এই ঘাটটি সংস্কারের উদ্যোগ নিবেন। ফেরাশিঙ্গা পাড়া এলাকার চিংড়ি চাষী কাইছার , ঘাট এলাকার ওয়াজ উদ্দিন, নতুন ঘোনা এলাকার চিংড়ি চাষী মহসিন রেজা, মানিকুল ইসলাম জানান করিয়ারদিয়া ও বদরখালীসহ বিভিন্ন বড় বড় মৎস্য প্রজেক্টের হাজার হাজার কর্মীর যাতাযাত করে এ ঘাট দিয়ে। তাছাড়া স্থাণীয়ভাবে উৎপাদিত চিংড়ি মাছ এ ঘাট দিয়ে বোটে তোলা হয় যার ফলে এটি অত্যান্ত গুরত্বপূর্ণ বলে দাবী করেন তারা।

এ বিষয়ে এলজিইডির পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদুল আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ট্রলারে ধাক্কায় এভাবে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবরটি শুনিনি। তবে এটি খুব শিগগির একটি একশ মিটার জেটিঘাঁট হিসেবে পুন: নির্মাণ করা হবে।