সংবাদদাতা:
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে চকরিয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি ছোটন কান্তি নাথকে মোবাইল ফোনে হুমকি ও ধর্মীয় পরিচয় তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের এমপি মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
মোবাইল ফোনে ছোটন কান্তির সঙ্গে এমপি ইলিয়াছের কথোপকথনের একটি অডিও শনিবার সকাল থেকে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো কক্সবাজার জেলায়। সমালোচনার ঝড় উঠেছে সাংসদ ইলিয়াছকে নিয়ে।
এমপি ইলিয়াছ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি।
হুমকি ও গালিগালাজের ঘটনায় ছোটন কান্তি নাথ চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে সাংসদ ইলিয়াছ মোবাইলে কল করে বিকৃত, কুরুচিপূর্ণ ও অকথ্য ভাষায় আমার ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালিগালাজ করেন। আমাকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় জড়িয়ে জেল খাটানোরও হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি আশঙ্কা করছি— সাংসদ সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আমাকে যেকোনো সময় অপহরণ করে খুন করে লাশ গুম করতে পারেন। জিডিতেও আমি এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছি।’
ছোটন বলেন, ‘গত ২৭ অক্টোবর ফেসবুকে আমি একটি স্ট্যাটাস দেই। স্ট্যাটাসটি ছিল— ‘জাফর ঠেকাতে মরিয়া বিরোধীরা। গভীর রাতে গোপন বৈঠক বিকাশের বাসায়!’ স্ট্যাটাসটি সাংসদ ইলিয়াছ তার বিরুদ্ধে প্রচার করা হয়েছে মনে করে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দেন।’
ইউটিউব ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৫৫ সেকেন্ডের অডিওটি শুনে সাংবাদিক ছোটনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া সাংসদ ইলিয়াছও অডিওতে থাকা কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অডিওটির ইউটিউব লিংক শেয়ার করে শনিবার সকাল থেকে ফেসবুকে অনেকে নিন্দা ও ঘৃণা জানান। এছাড়া একটি সম্প্রদায়কে ধরে গালিগালাজে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়ার সভাপতি রতন বরণ দাশ ও সাধারণ সম্পাদক মুকুল কান্তি দাশ।
চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ বলেন, ‘আমরা এমপি ইলিয়াছের অতীতের সব রেকর্ড জানি। এরপরও তিনি ঘটনাচক্রে এমপি হয়ে গেছেন, ভালো। কিন্তু যখন ব্যক্তিগতভাবে কাউকে হুমকি দিতে গিয়ে পুরো হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালিগালাজ করেন তখন তো আর বসে থাকতে পারি না।’
চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এম জাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজবাউল হক বলেন, ‘চকরিয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরী সভাপতি ছোটন কান্তি নাথকে গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়াসহ হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে স্থানীয় ভাষায় কুরুচিপূর্ণ কটূক্তির তীব্র নিন্দা জানাই। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক ছোটনের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দেওয়া হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক তা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রুজু করা হয়। বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের এমপি মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘সাংবাদিক ছোটনকে ফোন করার বিষয়টি সত্য। রাগের মাথায় তার সঙ্গে আমার কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। কিন্তু এই কথোপকথনের অডিওটি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাওয়াটা দুঃখজনক।’