মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :


আল হাইয়াতুল উলাইয়া লিল – জামি’আতিল কাউমিয়া বাংলাদেশ (কওমী মাদ্রাসা এসোসিয়েশন) কর্তৃক ৪ নভেম্বর রোববার সকাল ১০ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনার জন্য একইদিনের পূর্বনির্ধারিত জেএসসি, জেডিসি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সম্বর্ধনা আয়োজনকারী সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনুরোধে সরকার পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাটি আগামী ৯ নভেম্বর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে বলে ৩ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম ছায়েফ উল্লাহ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডঃ সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত পৃথক ৩টি জরুরী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা জানানো হয়েছে। ২৬ লাখ ৭০ হাজার কিশোর শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। রোববারের নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা চরম সংকটে পড়েছে। আগামীকালের পরীক্ষা পেছানোর কারণে এখন জেএসসি-জেডিসি কারগরী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের কোন বিরতি ছাড়াই ইংরেজি, অংক ও বিজ্ঞানের মত কঠিন তিনটি বিষয়ে টানা পরীক্ষা দিতে হবে। এতে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে পরীক্ষার্থীদের প্রচণ্ড চাপে পড়তে হবে। আবার বাতিল হওয়া পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবারে। তাই রোববারের পরীক্ষা বাতিলের খবরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে রোববার সারা দেশ থেকে লোক আসার সুবিধার্থে পরীক্ষা পেছানো হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে যথারীতি “অনিবার্য” কারণে পরীক্ষা পিছানো হয়েছে বলে জানিয়েছে। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সিদ্ধান্তকে অতিউৎসাহী কাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। অত্যাবশ্যকীয় ও যৌক্তিক কারণ ছাড়া রোববারের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে এই অজুহাতে ছোট খাট যেকোন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেকোন পরীক্ষা পেছেনোর আবদার ও দাবী যেকেউ সরকারের কাছে করতে পারে। দেশের চরম রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকারের এধরনের সিদ্ধান্তে সরকার কতটুকু লাভবান হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রোববারের অনুষ্ঠানটি কওমী মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের দাওরা হাদিসের সনদকে মাষ্টার্স সমমানের মর্যাদা দিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাশ করায় সংগঠনটি এই আয়োজন করছে। প্রথমে এই অনুষ্ঠানটি ৫ নভেম্বর সোমবার “প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা” অনুষ্ঠান হিসাবে আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়ছিল। পরে আয়োজকেরা তারিখ ও অনুষ্ঠানের নামের ধরণ পরিবর্তন করে ৪ নভেম্বর রোববার “শোকরনা মহাসমাবেশ” হিসাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অথিতি এবং সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহামদ শফি (দাঃ বাঃ)। সংগঠনটির রোববারের আয়োজন নিয়ে কওমী মাদ্রাসার শীর্ষ আলেম ওলামাদের মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়ায় তাঁরা এখন কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আল- হাইয়াতুল উলায়া লিল- জামি’য়াতিল কাউমিয়া বাংলাদেশ এর ব্যানারে রোববারের আয়োজন করা হলেও মূলতঃ হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশই এই আয়োজনের মূখ্য উদ্যোক্তা সংগঠন। বিভিন্ন বিতর্ক এড়ানোর জন্য হেফাজতে ইসলামের পরিবর্তে উল্লেখিত সংগঠনটি নাম ব্যবহার করছে।