বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরে যেদিনে চোখ যায়, শুধু ময়লা আবর্জনা। নির্ধারিত ডাস্টবিনে না ফেলে বাইরে ফেলা ফেলা হয় বর্জ্য। একদিনেরও বেশী সময় পড়ে থাকে ময়লা। পরিচ্ছন্নকর্মীরা যেন দায়সারা। পৌরসভার সামনেই স্তুপ করে রাখা আবর্জনা। দুর্গন্ধের কারণে আশপাশের বাসাবাড়ী ও দোকানপাটে বসাও দায়।
সর্বত্র ময়লা আবর্জনার ভাগাড় আর ভাঙ্গা রাস্তার কারনে নাগরিক জীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার পৌরসভার বেশির ভাগ নাগরিক। বর্জ্যরে দুর্গণ্ধের কারণে বমি আসায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে চায়না।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান নির্বাচনের আগে পরিচ্ছন্ন শহর উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। চিত্র পাল্টায়নি পূর্বের। পৌরসভার অধিকাংশ সড়কে দিনের পর দিন পড়ে থাকে বাসাবড়ী থেকে ফেলা উচ্ছিষ্টসমূহ। প্রায় সড়ক, উপসড়ক চলাচলের অনুপযোগি।
তবে, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হলেও শীঘ্রীই ময়লা অপসারণসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দ্রুত উন্নতি হবে বলে জানান পৌর মেয়র।
শহরের সাউথ ইস্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পর্যটন মৌসুম। ইতোমধ্যে দেশি বিদেশী পর্যটক আসা শুরু করেছে। কিন্তু পৌর শহরের যে দুর্বিসহ অবস্থা তা খুবই নাজুক। প্রতিদিন ব্যাংকে যেতে মারাত্নক দুর্ভোগে পড়তে হয়। কলাতলী থেকে বাজারঘাটা, কালুর দোকান, বামির্জ মার্কেট পর্যন্ত বর্জ্যব্যবস্থাপনায় করুণ দশা।
অনেক শিশু কিশোর ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় মুখে কাপড় গুজে দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। এটা কোনভাবেই পর্যটন নগরীর পরিবেশ হতে পারে না।
পেশকার পাড়ার বাসিন্দা কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রি নাজমুন আরা রেশমি বলেন, রাস্তাতে বের হলে খুব বাজে অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। চারিদিকে ময়লা আবর্জনা আর রাস্তাতে পানির কারনে হেটে যাওয়া দুরুহ হয়ে যায়। আবার রিক্সা দিয়ে গেলে আরো বিপদ। যানযটের কারনে আরো নাকাল হওয়ার অবস্থা। আর সব রাস্তা এত বেশি ভাঙ্গা বলার মত না। বিশেষ করে বড়বাজার থেকে বের হয়ে আইবিপি রোড এবং চাউল বাজার হয়ে বার্মিজ মার্কেট দিয়ে স্কুলে যে পথেই যাই না কেন, সব সময় দুর্গন্ধ আর ভাঙ্গা রাস্তার কারনে সিমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এনজিওতে কর্মরত বাহারছড়ার মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, আমাদের সাথে বহু বিদেশী লোকজন কাজ করে তারা শহরের বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে থাকে। কাজের শেষে তারা যখন ঘুরতে বা ছোটখাট কাজে বের হয় তাদের ভাষ্যমতে খুব বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। বিশেষ করে রাস্তাতে ময়লার দুর্গন্ধে হাটতে পারে না। এতে খুব বিরক্ত অনেক সময় তারা আমাদের বলে তুমাদের এলাকাকে কিভাবে পর্যটন নগরী বল? এই যদি হয় পর্যটন নগরীর অবস্থা তাহলেতো খুব খারাপ। এ সময় আমাদের খুব লজ্জা লাগে কিন্তু কিছু করতে পারিনা।
তিনি বলেন, আমি যতুটুক জানি বর্তমান পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান নির্বাচনের সময় একটি পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন। পত্রিকায় দেখেছিলাম তিনি ১০০দিনের একটি কর্মসূচি ঠিক করেছেন। কিন্তু এখনো দেখছি সেই আগের অবস্থা।
তবে সব কিছুর বাইরে ভাল দিক ও আছে বর্তমান পরিষদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে ময়লা অপসারণের গাড়ী, ডাম্পার, যোগ হয়েছে স্কেলেটরসহ আধুনীক যন্ত্রপাতি। তবে যাদের নিয়ে ময়লা অপসারনের প্রধান কাজ তাদের রয়েছে বেশ কিছু অভিযোগ,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেণ,সারা মাস কাজ করে আমাদের দেওয়া হয় সাড়ে ৫ হাজার টাকা। সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ময়লা অপসারনের কাজ করি,মানুষের বাসাবাড়িতে গিয়েও ময়লা নিয়ে আসি কিন্তু সেটার কোন মুল্যায়ন নাই। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হয়ে একদিন কাজে না আসলে বেতন কেটে নেয়। সব চেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে ঠেলাগাড়ি নেই। বেলসা বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকে না কাজ করার জন্য তবুও আমাদের উপর কাজ চাপিয়ে দেয় উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এমনও দিন গেছে হাতে ময়লা পরিস্কার করেছি তবুও কারো মন পায় না।
এদিকে শহরে ময়লা আবর্জনার জন্য পৌর পরিষদের দায়িত্বের পাশাপাশি নাগরিকদের দায়িত্ব কর্তব্য আরো বেশি বলে মনে করেন জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. আয়াছুর রহমান।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় ১১ টার সময় পৌরসভার লোকজন এসে ময়লা নিয়ে গেছে কিন্তু বাসাবাড়ি থেকে ময়লা ফেলছে ১২ টার দিকে সেই ময়লা সারাদিন রাত রয়ে যাচ্ছে। আর সবাই ময়লা ফেলে রাস্তাতে এতে দুর্গন্ধ বেশি ছড়ায়। সে জন্য আমি মনে করি সকাল ৮ টার মধ্যে সমস্ত বাসাবাড়ির ময়লা চলে আসতে হবে এর পরে কেউ যেন এর পরে ময়লা না ফেলে,ময়লা থাকলে সেটা বাসাতেই রাখতে পরের দিনের জন্য। আর খুব পচাঁ জিনিস হলে দূরে গিয়ে ডাষ্টবিনে ফেলবে।
টেকপাড়া সমাজ কমিটির সাবেক সভাপতি আমির হোসেন বলেন, আমার মতে প্রত্যেক আবাসিক এলাকা গুলোতে পৌরসভার পাশাপাশি একচি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ময়লা অপসারনের জন্য লোকবল থাকা দরকার। তারা দিনের যে কোন সময় প্রত্যেক বাসাবাড়িতে গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করবে আর পৌরসভার নির্দিষ্ট গার্বেজে গিয়ে ফেলবে। মোট কথা কোন ময়লা রাস্তায় ফেলা যাবে না। আর পৌরসভার ভেতরের অভ্যন্তরিন রাস্তা গুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা দরকার।
এ ব্যপারে কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, আবর্জনা যথা সময় অপসারনের জন্য পৌর মেয়রের নেতৃত্বে সবাই কাজ করছে। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে লেবার সংকটে পড়তে হচ্ছে। পুরাতন শ্রমিকগুলো ভাল বেতন পাওয়াতে সব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, শুধু কনঞ্জারভেন্সি বিভাগে নতুন কয়েকটি গাড়ি সংযোজন করা হয়েছে। লেবারের বেতন ভাতা বাড়ানোসহ তাদের নানান ভাবে অনুপ্রেরনা দিয়ে কাজে গতি আনা হয়েছে। বর্তমানে ও আমি ঢাকাতে সেই কাজেই এসেছি। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পৌরসভা। সব মিলিয়ে আগামীদিনের পৌরসভা হবে একটি সুন্দর পৌরসভা। আর পৌরসভার সমস্ত রাস্তা ঘাট খুব দ্রুত মেরামত করা হবে বলেও জানান তিনি।