বার্তা পরিবেশক:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কক্সবাজার সদর-রামু আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বলে গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। রামুতে ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইকিং করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে এ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কমলের কিছু কর্মী ও সমর্থক মিলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।
রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম মন্ডল বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৪ টা থেকে রামুর প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কক্সবাজার-রামু আসন থেকে কমলকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে আগামী শনিবার ( ১০ নভেম্বর) রামুর চৌমোহনী চত্ত্বরে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ শেষে সেখান থেকে একটি গণমিছিল কক্সবাজার শহরে যাবে। এছাড়াও ফেসবুকে তার কর্মী সমর্থকরা এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করা হচ্ছে। এর আগেও তিনি এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘কাল (আজ শনিবার) রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভা আহ্বান করা হয়েছে। স্বপ্নপূরীতে এ সভা হবে। মূলত রামুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ সম্মেলনকে কাউন্টার করতেই এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন সাংসদ কমল। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় অপপ্রচারের বিষয়টি নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব এবং প্রতিবাদ জানাব। তিনি এভাবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। এতে বিব্রত বোধ করছেন নেতাকর্মীরা।’
সন্ধ্যা সাতটার দিকে কমলের ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে পরিচিত আবু বক্কর তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘আগামী ১০ তারিখ রোজ শনিবার সাইমুম সরওয়ার কমল এমপির নেতৃত্বে রামু থেকে ও ঈদগাহ থেকে কক্সবাজারে লাখো মানুষের গণমিছিলে অংশগ্রহনের জন্য সবার প্রতি অনুরোধ রইলো।’
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার পর ইমরান খান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘এই মুহুতে খবর এলো এমপি কমল ভাই আল্লাহ’র রহমতে নৌকার টিকেট পেলো।’ তার স্ট্যাটাসটিও সাংসদ কমল, তার ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে পরিচিত আবু বক্করসহ আরও চার জনকে ট্যাগ করা হয়েছে। রাত ৯ টা ৫৩ মিনিটে দেখা যায়, ওই স্ট্যাটাসে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ৩৩৭ জন ব্যবহারকারী। মন্তব্য করা হয়েছে ৩১টি। সেটি ফেসবুকে ভাগাভাগি করেছেন ৯ জন।
রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মো: শফি নামে একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন (হুবহু তুলে ধরা হলো), ‘এই মুহুর্তে খবর এল জননেতা কমল ভাই নৌকার টিকেট পেল, আগামী ১০ তারিখ লাখো জনতা নিয়ে কক্সবাজার বিমান বন্দরে রিছিভ করব ইন্সআল্লাহ্ ।’ স্ট্যাটাসটি তিনি সাংসদ কমলসহ ৪৬ জনকে ট্যাগ করেছেন।
রাত ৯ টার দিকে মো: হাবিবুল আসিফ নামে আরেক জন একই স্ট্যাটাস লিখেন তার ফেসবুক ওয়ালে। তার স্ট্যাটাসটিও সাংসদ কমল, তার ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে পরিচিত আবু বক্করসহ আর একজনকে ট্যাগ করা হয়েছে। একই সময়ে একই স্ট্যাটাস দেন নাসির নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। তিনিও স্ট্যাটাসটি কমলকে ট্যাগ করেছেন। রাত ৯ টা ৩৯ মিনিটের দিকে দেখায়, তার স্ট্যাটাসটিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ২১৩ জন, মন্তব্য করা হয়েছে ২২টি। স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে ভাগভাগি করেছেন ৬ জন।
নাসিরের ওই স্ট্যাটাসে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি ছৈয়দ আলম সুলতান মন্তব্য করেন, ‘আলহামদুল্লিাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে লাখো কোটি শকোরিয়া আদায় করছি। আমাদের মাটি ও মানুষের পরম বন্ধু, রামু কক্সবাজার উন্নয়নের অন্যতম অন্যতম সেরা নৌকার মাঝি হিসেবে সাইমুম সরওয়ার কমল ভাইকে পেয়ে। এবং খুনিয়াপালং ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি জনাব ছৈয়দ আলম সুলতান মেম্বারের পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন শুভ কামনা রইলো।’ এছাড়াও এসএম রেজাউল করিম, রিয়াজ আহমেদ, এমডি আব্দুল্লাহ, হেলাল উদ্দিন, ইসহাক সিকদার, মো: দেলোয়ারসহ অনেকেই কমল নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বা মনোনয়ন নিয়ে আসছেন-এমন তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন ফেসবুকে। অধিকাংশ স্ট্যাটাস কমলকে ট্যাগ করা হলেও এসব স্ট্যাটাসে তাকে কোন ধরনের মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছেÑএমন খবর আমাদের কাছে নেই। কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকলে বা প্রচার করে থাকলে সেটি বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া কিছু নয়। এর ধরনের মিথ্যা প্রচারণা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’