সিবিএন ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার কারণে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীটি নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে এই পরিকল্পনায় জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত না করায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

শুক্রবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, নভেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রস্তাবিত প্রত্যাবাসন পরিকল্পনায় রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের মিয়ানমারে অত্যন্ত ‘সংকটময় পরিস্থিতিতে’ ফেরত পাঠানো হবে, যেখানে তাদের জীবন ও স্বাধীনতা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতিসংঘের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। শরণার্থীরা নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।

মানবাধিকার সংস্থাটির শরণার্থী অধিকার বিভাগের পরিচালক বিল ফ্রেলিক বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকার ফেরত নেয়ার কথা বলেই যাচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা যে হিংস্রতা ও দমন-নিপীড়ন থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের আবার সেরকম অবস্থার মধ্যেই ফেরত পাঠানো হবে না এমন আশ্বাস দিতে মিয়ানমার কিছুই করেনি।’

জাতিসংঘকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা এগিয়ে নিলে তার ফলও বাংলাদেশের জন্য ভালো হবেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘এতে করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক মহলে যে সুনাম কুড়িয়েছে তা পুরোটাই তারা নষ্ট করবে,’ বলেন বিল ফ্রেলিক।

দৃশ্যত, বাংলাদেশ সরকার নির্বাচনের আগে আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু করতে উদগ্রীব বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ৩০ ও ৩১ অক্টোবর প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তৃতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হয়েছিল।

এই পরিকল্পনার আওতায়, নভেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে ৪৮৫টি পরিবারের ২,২৬০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা জানানো হয়।

ফেরত পাঠানোর জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তারা এখন মিয়ানমারে ফিরে যেতে ইচ্ছুক কিনা তা তাদেরকে জিজ্ঞেস না করেই তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

ছবি: আবু সুফিয়ান

‘আমরা যে তালিকা তৈরি করেছি তাতে যাদের নাম রয়েছে তারা ফেরত যেতে বিশেষ আগ্রহী, তাই তাদের নাম রাখা হয়েছে বিষয়টা এমন নয়,’ এইচআরডব্লিউকে জানান আবুল কালাম। তিনি বাংলাদেশের রিফিউজি রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কমিশনার।

জুন মাসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এবং ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

এরপর থেকে জাতিসংঘের সংস্থা দু’টি সীমিত আকারে রাখাইন রাজ্যের অবস্থা পর্যালোচনা করা শুরু করেছে। কিন্তু, বাংলাদেশ বা মিয়ানমার, কোনো দেশের কর্মকর্তারাই ফেরত পাঠানোর তালিকা প্রস্তুত করার সময় ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কথা বলেনি। এই তালিকায় যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নাম আছে তাদের সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেনি দুই দেশের কর্মকর্তারা।

ছবি: আবু সুফিয়ান

জাতিসংঘ এই পরিকল্পনাকে ‘তাড়াহুড়ো করে তৈরি এবং অকালপক্ক (rushed and premature)’ হিসেবে অভিহিত করে এর বিরোধিতা করেছে।

ইউএনএইচসিআর’র মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেচিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের অবস্থা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়ার মতো নিরাপদ বলে মনে করছি না আমরা। একারণে ইউএনএইচসিআর এই পর্যায়ে রাখাইন রাজ্যে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনও সহায়তা করবে না।’

রোহিঙ্গাদের বৈধ শরণার্থীর মর্যাদা দিয়ে জাতিসংঘকে এই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনায় প্রধান ভূমিকা পালন করতে উচিৎ বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি।

গত বছর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন নিপীড়ন থেকে প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। তারা আগে বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা আরও দুই লাখ শরণার্থীর সঙ্গে যোগ দেয়, বলছে এইচআরডব্লিউ।

সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিধনযজ্ঞে জড়িত থাকার দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য জোগাড় করতে পেরেছে জাতিসংঘ।