সিবিএন ডেস্ক:
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্পসহ ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩০৬ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ হাজার ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে।

মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, রোহিঙ্গারা যতদিন কক্সবাজারে থাকবেন ততদিন তাদের ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তাদের ভালো থাকার ব্যবস্থা করছি। যখন তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবেন তখন সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরা এসব অবকাঠামোর সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। কেননা রোহিঙ্গাদের কারণে তারা অনেক কষ্ট ভোগ করছেন। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অনেক সংস্থা ও দেশ অনুদান দিচ্ছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

মন্ত্রী আরও বলেন, একনেকে ডাকঘরগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ই-কর্মাসসহ বিভিন্ন নতুন কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণের পাশাপাশি যেখানে গণহত্যা হয়েছে, সেখানকার গণকবরে যারা শায়িত আছেন তাদের নাম খুঁজে বের করে তালিকা লিখতে হবে। যাদের নাম পাওয়া যাবে না, সেখানে লিখতে হবে নাম না জানা আরও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা। সব পুলিশের জন্য পর্যায়ক্রমে আবাসন ব্যবস্থা করা এবং প্রত্যেক জেলায় একটি করে ১০ তলা ভবন তৈরির নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বগুড়া হতে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন- সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া, ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৫ নং জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা,ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়কের নিরাপত্তা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ডিজিএফআই এর টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ৪২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় সংশোধিত) খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। রাজউক পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়ক হতে মাদানী এভিনিউ- সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৫৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ডাক অধিদফতরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর যোদ্ধাদের সমাধি স্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজএ্যাবিলিটিজ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪২২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৬৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৩৫ কোটি টাকা। পতেঙ্গায় বিএনএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ঢাকায় বিসিক কেমিক্যাল পল্লী স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। গাজী ওয়্যারস লিমিটেড শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট এলএনজি বেইজড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পাদন এবং গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।