বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজারে তাবলীগ জামাতের ইজতেমা করা না করা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে তিনটি গ্রুপ। দিল্লির মাওলানা সাদ পন্থিরা চাচ্ছে যেভাবেই হোক তারা ইজতেমা করবে। ৮, ৯, ১০ নভেম্বর ইজতেমা করার পক্ষে অনড়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন কবিতা চত্ত্বরের ঝাউবন জুড়ে প্রস্তুতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গ্রুপটি।
দেওবন্দপন্থি তাবলীগ জামাত আগামী ১, ২, ৩ নভেম্বর শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট সংলগ্ন ঝাউবাগানের পশ্চিম পার্শ্বে ইজতেমার সিদ্ধান্ত নিলেও দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি কারণে ইজতেমা না করার পক্ষে।
এমনকি সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের বিপক্ষে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা সাদপন্থিদের আয়োজনের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারী দিয়েছে।
অন্যদিকে কওমী ওলামারা দুইটি গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানে আপাততঃ কক্সবাজারের ইজতেমা স্থগিত রেখে পর্যবেক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে কক্সবাজারে ইজতেমা করা না করা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষের আশংকা করছে স্থানীয়রা।
এদিকে, হঠাৎ করে তাবলীগের মধ্যে এমন বিভক্তি সাধারণ মানুষকে বিস্মিত করেছে। তাদের অবস্থা দেখে খোদ প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাতে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, কোনপক্ষকে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি। আপাততঃ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। উভয়পক্ষের মিটিংয়েও সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি বুঝে পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ২৯ অক্টোবর সকালে ৩টি গ্রুপের প্রতিনিধিদের ডেকে সমঝোতা বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজার পৌরমেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার।
ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন তাবলীগের গ্রুপিং, দেশের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইজতেমা না করে জাতীয় নির্বাচনের পরে করার পরামর্শ দেন। একই কথা বলেন পুলিশ সুপারও।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বৈঠকে সাদ পন্থিদের পক্ষে ছিলেন ঢাকার মুফতি আতাউর রহমান, চট্টগ্রামের আব্দুল হালিম সওদাগর, কক্সবাজারের এডভোকেট হামিদুল্লাহ, হাজি মুসা মিয়া সওদাগর, অনাস, সাদ বিন মোজাম্মেল, ডা. শামসুদ্দিন প্রমুখ।
দেওবন্দপন্থি তাবলীগ জামাতের পক্ষে ছিলেন- মুফতি মুরশেদুল আলম চৌধুরী, মাওলানা আতাউল করিম, মাওলানা জাফর আলম, মুফতি সাঈদুল ইসলাম, মাওলানা জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
আলেমদের পক্ষে ছিলেন- মুফতি মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ শফিক, মাওলানা মোসলেম উদ্দিন, মাওলানা মোহসেন শরীফ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুছ ফরাজি।
বৈঠকে সাদ পন্থি মুফতি আতাউর রহমান ও আব্দুল হালিম সওদাগরকে ‘তাবলীগে অন্তঃকোন্দল সৃষ্টিকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দেন দেওবন্দপন্থি তাবলীগের মাওলানা আতাউল করিম।
তিনি অভিযোগ করেন বলেন, ওরাই আমাদের মধ্যে ‘বিভেদের আগুন’ ধরিয়ে দিয়েছে। কক্সবাজারে সাদপন্থি কোন লোক নেই। ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে এসে গ্রুপিং তৈরী করেছে। আমাদের ভ্রাতৃত্বের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে।
ওই বৈঠকে উপস্থিত মাওলানা জাফর আলম দুঃখ করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে তাবলীগের খেদমতে আছি। কক্সবাজারের মারকাজ আমাদের হাতে গড়া। সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু আজ শেষ বয়সে গ্রুপিং দেখে বড় দুঃখ পেয়েছি। সেই দুঃখ যন্ত্রণা নিয়ে মারকাজ ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছি। তাদের মধ্যে দ্বীনের চেয়ে নিজের স্বার্থ ঢুকে গেছে।
প্রশাসনের বৈঠকে সাদপন্থি মুফতি আতাউর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইজতেমা হচ্ছে। আরো হবে। দেশের বাইরেও ইজতেমা চলছে। শুধু কক্সবাজারে ইজতেমা করতে সমস্যা কেন? দ্বীনের প্রয়োজনে তিনি ইজতেমার সুযোগ করে দিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
একটি সুত্র জানায়, বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাঈলের শুরায় সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর ৬৪ জেলার ইজতেমা হবে টঙ্গীর ময়দানে। জেলা পর্যায়ে কোন ইজতেমা হবে না।
কিন্তু দিল্লির বিতর্কিত ব্যক্তি মাওলানা সা’দের এতায়াতপন্থীরা কাকরাঈলের শুরার সিদ্ধান্ত ও টঙ্গীর ইজতেমাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলায় ইজতেমা করার তৎপরতা চালায়। তাতে বাধ্য হয়ে ১, ২, ৩ নভেম্বর কক্সবাজারে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলার সর্বস্তরের তাবলীগের মুরব্বী ও আলেম ওলামারা।
একটি সুত্র জানিয়েছে, পুরো জেলায় সা’দ পন্থী রয়েছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তারা তাবলীগের মূলধারা বিচ্ছুত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে লোকজন এনে তারা ইজতিমা আয়োজনের কাজ করেছে। ক্যাম্প থেকে ইজতেমার নামে যারা বের হবে তারা নাও ফিরতে পারে। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।