ডেস্ক নিউজ:
আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপে বসতে প্রস্তুত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সরকারি দলটি নাটকীয়ভাবে সংলাপে বসতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা একাধিক বৈঠক করেছেন। তারা সংলাপের বসার এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা ঘোষণা করেছে। সেই সাত দফাই হবে সংলাপে আলোচনার মূল ভিত্তি। সংলাপের ফল দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগে সংলাপে বসতে গত রোববার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। সেই চিঠির ভিত্তিতে গতকাল সরকারি দল সংলাপে বসতে রাজি বলে ঘোষণা দিয়েছে।

জানা গেছে, ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সংলাপে অংশ নেবেন। বৈঠকে ড. কামাল কেন তাদের সাত দফা এবং কেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রয়োজন, তা লিখিতভাবে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার মধ্যে রয়েছে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দেয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।

গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সংলাপের দরজা খোলা রেখেই কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। সিলেট ও চট্টগ্রামে ফ্রন্টের আহ্বানে বিশাল সমাবেশের পর আগামী ২ নভেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

জানা গেছে, ২ নভেম্বর ঢাকার জনসভা থেকে আলটিমেটাম দিয়ে তফসিল ঘোষণার দিন থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা সংলাপে রাজি হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়ায় এ ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসবে; সংলাপের ফল দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঐক্যফ্রন্টের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, সংলাপের কথা বলে ক্ষমতাসীনেরা যদি সময়ক্ষেপণের কৌশল নেয় তাহলে পাল্টা কৌশল নেবে ঐক্যফ্রন্ট। সে ক্ষেত্রে সংলাপের পাশাপাশি কর্মসূচিও চলতে পারে।
ক্ষমতাসীনেরা সংলাপের কথা বললেও আন্দোলনের প্রস্তুতি থেকে সরে আসবে না ঐক্যফ্রন্ট। সাত দফা দাবি সরাসরি নাকচ করে দেয়া হলে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে তারা মাঠে নামবেন।

সূত্রমতে, আগামী ৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য দিন থেকে আন্দোলনের ছক তৈরি করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এর আগেই সরকার যদি সংলাপে না বসে তাহলে ওই দিন থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এ জোটের।

বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা জানান, সংলাপে বসতে ক্ষমতাসীনেরা রাজি হওয়াটা ইতিবাচক। তবে সংলাপের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক সংলাপ ফলপ্রসূ হওয়ার ঘটনা নেই বললেই চলে। এ জন্য সংলাপের পাশাপাশি আন্দোলনের সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো সমঝোতা হওয়ার আগেই তফসিল ঘোষণা করা হলে ওই দিন থেকে আন্দোলন শুরু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতে বিএনপির সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে তফসিলের আগে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এড়িয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তফসিলের ঘোষণার দিন থেকে মাঠের আন্দোলন সফল করার প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বলেছেন, আন্দোলনের চূড়ান্ত সময় নির্ধারণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চেম্বারে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। বৈঠকের একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। তিনি আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপের জন্য আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদেরকে জানানো হবে কখন, কোন সময়ে, কোন তারিখে এ আলোচনা হবে। আমরা সেটি জানলে তাতে অবশ্যই সাড়া দেবো।

মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এ মামলার কার্যক্রম চলেছে এবং রায় দেয়া হয়েছে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা আশা করি সরকার বেগম জিয়ার জামিনের সব বাধা দূর করে তাকে দ্রুত মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবে। আমরা মনে করি এ মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ দিকে নির্বাচন কমিশনের সাথে আজ বৈঠক করার কথা ছিল ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু সংলাপে বসার ঘোষণা আসায় নতুন করে বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। মওদুদ আহমদ বলেছেন, আজ তারা ইসিতে যাচ্ছেন না। কারণ সংলাপেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হবে।

মওদুদ আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে জেএসডির আ স ম আবদুর রব, আবুল মালেক রতন, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান, জাহেদ উর রহমান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো: মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন উপস্থিত ছিলেন।