সংবাদদাতা:
কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে কাজ না করেই গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছে।
অভিযোগের আঙ্গুল পিএমখালীর ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সুলতান আহাম্মদ ও ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার রমজান আলীর বিরুদ্ধে। তারা পরস্পর যোগ সাজসে প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
সুত্র জানায়, পিএমখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ছনখোলা হতে খুরুস্কুলের পাকা রাস্তা পর্যন্ত সংযোগ সড়কটিতে রাতদিন ডাম্পার চলাচল করার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। ছোটবড় গর্ত হয়ে চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের আবেদন ও বাস্তবতার বিষয়টি বিবেচনা করে কাবিখা প্রকল্প থেকে ৩ লক্ষ (রাস্তা সংস্কার ১লক্ষ ৫০ হাজার, সৌর বিদ্যুতের বাতি স্থাপন ১লক্ষ ৫০ হাজার) টাকা বরাদ্ধ দেয় কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউপি চেয়ারম্যানের সাক্ষরিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) এর আওতায় ৫ সদস্যের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রমজান আলী, সেক্রেটারী ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সুলতান আহাম্মদ, সদস্য জিয়াউল হক, মোহাম্মদ আলী ও শাহীনা আক্তার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কমিটির সভাপতি রমজান আলী ও সেক্রেটারী সোলতান আহাম্মদ কৌশলে কাগজে কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন। যা কমিটির বাকী ৩ সদস্য জানেনা।
এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে এ এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এ অভিযুক্ত মেম্বারদ্বয়ের বিরুদ্বে অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পাওয়া যায়।
পুরো রাস্তা ঘুরে ওই প্রকল্পের আওতায় কোন দৃশ্যমান কাজ চোখে পড়েনি আর সৌরবিদ্যুতের লাইট ও স্থাপন করা হয়নি।
এভাবে গোপনে বর্তমান ও সাবেক দুই জনপ্রতিনিধি মিলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পকেটস্থ করার বিষয়টি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যবসায়ী জানায়, গ্রামীন এ কাঁচা রাস্তা দিয়ে সাবেক মেম্বার সুলতান আহাম্মদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের মালিকানাধীন কয়েকটি ডাম্পার মাটি বালি কাট ভর্তি ভারী বোঝা বহনে রাতদিন বেপরোয়া চলাচলের কারণে সংযোগ সড়কটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।
পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার আব্দুর রহিমকে অবহিত করলে তিনি জরুরী ভিক্তিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
উপজেলা পরিষদ সুত্র মতে, বরাদ্ধের মধ্যে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা রাস্তা সংস্কারের জন্য, আর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা সৌরবিদ্যুতের লাইট স্থাপনের জন্য দেয়া হয়।
কিন্ত তারা দু’মেম্বারে রাস্তায় কোন দৃশ্যমান সংস্কারমুলক কাজ না করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এ রাস্তায় তাদের নিজের অর্থায়নে কাজ করার নামে এলাকার মানুষের নিকট থেকে বাঁশ-কাট ও টিনের ড্রামসিট বিনামুল্যে সংগ্রহ করে ওই রাস্তার দৃশ্যমান ২/১ স্থানে দশ/পনেরটির মত বাঁশে খুঁটির সাথে টিনের ড্রামসিট সংযুক্ত করে রাস্তার সাইটে পুঁতে দিয়ে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করেন।
তাদের বিরুদ্ধে এরকম আরো অভিযোগ এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, মেম্বার রমজান আলী ও সুলতান মেম্বার স্থানীয়দের নিকট থেকে কাট বাঁশ ড্রামসিট বিনামুল্য সংগ্রহ করে (লোক দেখানো) রাস্তার খাদে পুঁতে দেন। এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদাবী জানিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ।
অভিযোগের কথা অস্বীকার করে প্রকল্পের সভাপতি রমজান আলী জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পরিষদ চেয়ারম্যান, পিআইওসহ সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন এবং শেষে বুঝে নেন।
৩ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে দেড় লাখ টাকায় ২টি সৌরবিদ্যুৎ লাইট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছে। বাকী দেড়লাখ টাকার কাজ হয়েছে কিনা তা সরেজমিন দেখলে পরিস্কার হবে। তাতে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি।
তিনি বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করলে কাজ হয়েছে, নাকি দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট হবে।
এরপরও একটি পক্ষ উন্নয়ন কাজ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে প্রপাগাণ্ডা করছে বলে মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মাষ্টার আব্দুর রহিম জানান, অভিযোগ কতটুকু সত্য তা তদন্ত করে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুদুর রহমানও তদন্ত পূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।