মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ)তে চিকিৎসাধীন দীর্ঘদেহী কক্সবাজারের জিন্নাত আলীকে প্রতিদিন একসাথে ১৮ জনের খাবার হাসপাতাল থেকে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। ৮ ফুট ৫ ইন্ঞ্চি লম্বা কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামের আমির হামজা ও শাহপুরী বেগমের সন্তান জিন্নাত আলী। ১৯৯৮ সালে জিন্নাত আলীর জন্ম। সে হিসাবে তার বয়স প্রায় ২২ বছর। জিন্নাত আলী দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে হরমোন ও থায়রয়েড জনিত রোগে ভূগায় সে গত ১১ আগষ্ট কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন তার পা দুটো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। সেখান থেকে কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সহযোগিতায় গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে জিন্নাত আলী সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী জিন্নাত আলী’র ফ্রি চিকিৎসার ব্যাবস্থা ও তার নিজ গ্রামে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার দায়িত্ব নেন। পরে জিন্নাত আলীকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমইউ (সাবেক পিজি হাসপাতাল)তে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে সরবরাহ দেয়া খাবারে জিন্নাত আলী’র ক্ষুধা কোনভাবেই নিবারণ না হওয়ায় একই ওয়ার্ডের আশে পাশের ৬/৭ জন রোগীর খাবারও তাকে দেয়া হতো। এতে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জিন্নাত আলীর সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এ খবর বিএসএমইউ’র পরিচালক জানার পর স্পেশাল অফিসিয়াল অর্ডার করে জিন্নাত আলী’র জন্য ২৭ অক্টোবর থেকে প্রতি বেলায় একত্রে ৬ জনের খাবার তার জন্য সরবরাহ দেয়া হয়। অর্থাৎ প্রতিবেলায় ৬ জন করে প্রতিদিন মোট ১৮ জনের খাবার জিন্নাত আলীকে হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয় বলে পলাশ নামক হাসপাতালের একজন খাদ্য কর্মী জানিয়েছেন। এতে জিন্নাত আলীর কোন রকমে পেটের ক্ষুধা নিবারণ হলেও সরবরাহ করা ভাত সিদ্ধ চালের হওয়ায় সেভাত খেতে জিন্নাত আলী স্বাদ পাচ্ছেনা। তাছাড়া হাসপাতালের রান্নার মানও খুব নীচু বলে সে জানায়। পরিবারের ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে জিন্নাত আলী তৃতীয়। জিন্নাত আলী’র পরিবারের সদস্যদের শারীরিক উচ্চতা কারো সাড়ে ৫ ফুটের বেশী নয়। জিন্নাত আলী’র সাথে থাকা তার বড় ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, ১৩/১৪ বছর বয়স থেকেই জিন্নাত আলীর শরীর অস্বাভাবিকভাবে লম্বা হতে থাকে। তার সাথে হরমোন, থায়রয়েড সহ বিভিন্ন জটিল রোগ ব্যাধি জিন্নাত আলীর শরীরে ক্রমান্বয়ে বাসা বাঁধে। অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় ব্যায়বহুল এসব রোগের পুরোপুরি চিকিৎসা করা তাদের পক্ষে কখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। অন লাইন নিউজ পোর্টাল সিবিএন-এ গত ২ অক্টোবর “আমার সাথে কুলাকুলি করতে মই লাগবে” শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিন্নাত আলী’কে নিয়ে সংবাদ ও স্টেটাস প্রকাশিত হওয়ার পর মূলতঃ জিন্নাত আলীর ভাগ্যের মোড় ফিরে যায় বলে তার বড় ভাই মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানিয়েছেন। এজন্য জিন্নাত আলী’র পরিবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিবিএন সহ তার নিউজ প্রচার করে তাকে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, সেসকল গণমাধ্যমের প্রতি জিন্নাত আলী আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর রামু’র ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা গত ২৬ অক্টোবর জিন্নাত আলীর গ্রামের বাড়ি ভিটে পরিদর্শন ও পরিমাপ করে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রাক্কলন তৈরী পূর্বক ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরন করেছেন বলে রামু ইউএনও অফিসের প্রধান সহকারী একেএম ছানাউল্লাহ্ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ওয়ার্ল্ড গ্রিনিচ বুকে ২০০৯ সালে রেকর্ড হওয়া পৃথিবীর সর্বোচ্চ লম্বা মানুষ হচ্ছে ৮ ফুট ৩ ইন্ঞ্চি দীর্ঘ তুরস্কের সুলতান কাশেম। কিন্তু জিন্নাত আলী’র শারীরিক উচ্চতা ৮ ফুট ৫ ইন্ঞ্চি হওয়ায় ওয়ার্ল্ড গ্রিনিচ বুকে তার নামই অর্ন্তভূক্ত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে জিন্নাত আলী’র এবিষয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। জিন্নাত আলী’র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যথাসময়ে তার চিকিৎসা করা হলে তার শারীরিক উচ্চতা আরো ২ থেকে ৩ ইন্ঞ্চি বৃদ্ধি পেতো। এখনো দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে তার শারীরিক উচ্চতা আরো ১ ইন্ঞ্চি মতো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জিন্নাত আলীর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে ৮ ফুটের বেশী লম্বা মানুষকে বেশী বয়স পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা খুব দূঃসাধ্য হয় বলে চিকিৎসকেরা বিভিন্ন গবেষনার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন। জিন্নাত আলী’র চিকিৎসকেরা জানান, ২৮ অক্টোবর থেকে তার পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা পূর্বক বোর্ড গঠন করে জিন্নাত আলী’র প্রকৃত চিকিৎসা শুরু করতে আরো ১৫/১৬ দিন সময় লাগবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।