শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অনেক অপেক্ষা পেরিয়ে অবশেষে মুক্তি মিলেছে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদের। শিলংয়ের আদালত তাঁকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাকে স্বদেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসতে আর কোনো বাধা রইল না তাঁর। সালাহ আহমদের মুক্তিতে বিএনপি রাজনীতির অঙ্গনে এক ফল্গুধারা সৃষ্টি হয়েছে। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পুরো বাংলাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীরা। এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা কক্সবাজার জেলার বিএনপির নেতাকর্মীদের একটু বেশি। কেননা সালাহ উদ্দীন আহমদ কক্সবাজারের সন্তান এবং রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাই সালাহ উদ্দীন আহমদের মুক্তি খবরে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেক কেটে নানাভাবে উল্লাস প্রকাশ করছে।  বিতরণ করা হচ্ছে মিষ্টি।

জানা গেছে, জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখার তালিকায় সালাহ উদ্দীন আহমদ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কেননা স্বাধীনতা উত্তর এবং পরবর্তী সময়ে কক্সবাজারের কেউ তাঁর মতো এভাবে দাপুটে রাজনীতি করতে পারেনি। সালাহ আহমদ তাঁর প্রখর মেধা আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে এক বড় স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনবার দেশের সরকার পরিচালনা করা দল বিএনপির মতো একটি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যের হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। এটাকে কক্সবাজারের বিএনপি ঘরানাসহ সাধারণ লোকজন কক্সবাজারবাসীর জন্য একটি বড় পাওয়া বলে মনে করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে দেশবাসীকে চমকে দিয়েছেন সালাহ উদ্দীন আহমদ। কারণ জ্ঞানগর্ব কথা আর গঠনমূলক সমালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে মাইলক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। সালাহ উদ্দীনের একজন মানুষ শুধু বিএনপি নয়; পুরো কক্সবাজারের সম্পদ মনে করা হয়।

২০১৫ সালের মার্চে ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর মে মাসে ভারতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের একটি রাস্তা থেকে উদ্ধার করা হয় সালাউদ্দিন আহমেদকে। তবে কে বা কারা তাকে ওখানে নিয়ে এসেছিল বা কীভাবে তিনি ঢাকা থেকে শিলংয়ে এসে উপস্থিত হলেন, সে ব্যাপারে সালাউদ্দিন আহমেদ কিছুই জানাতে পারেননি। তবে পরিবারের অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে।


ভারতের অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১৫ সালের মার্চে বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। সিটি থানায় দায়ের করা ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিচারক তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। জামিনের প্রধান শর্তই হলো- শিলংয়ের বাইরে যাওয়া চলবে না। আর সে কারণেই সালাউদ্দিন আহমেদ আপাতত সেখানেই একটি গেস্ট হাউস ভাড়া করে আছেন। অসুস্থতার জন্য তার চিকিৎসাও চলছে ওই শহরেই। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে স্ত্রী-সন্তান ও বন্ধুবান্ধবরা এসে সেখানে দেখা করে যান।

সালাহ উদ্দীন মুক্তি পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কক্সবাজারের বিএনপি স্তরের নেতারা।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক এই সংকটময় মুহূর্তে সালাহ উদ্দীন আহমদের বেকসুর খালাসের রায়ে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে বিএনপি নেতাকর্মীসহ পুরো দেশবাসী। প্রিয় এই অভিভাবকের দ্রুত দেশে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বাসে মুখরিত কক্সবাজারবাসী।’

জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না বলেন, ‘দেশের এই দুঃসময়ে সালাহ উদ্দীন আহমদের মুক্তি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের; অনেক খুশির। এটা আমাদের একটি নতুন জয়যাত্রা। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি; সে জন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। আমরা তাঁর ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি।’

জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির রতœ সালাহ উদ্দীন আহমদ মুক্তি পেয়েছেন- এটা আমাদের অত্যন্ত খুশির খবর। রাজনৈতিক অঙ্গনের সিংহ পুরুষ সালাহ উদ্দীনের দক্ষিণ চট্টলার মানুষসহ সারা দেশের মানুষ অনেক খুশি হয়েছেন। তাঁর দেশের ফেরার অপেক্ষায় আমরা বরণ সাজিয়ে বসে রয়েছি। তিনি যেন সকল আইনী বাধা দূর করে সহি-সালামতে দেশে ফিরে আসতে পারে তার জন্য আমি সবার কাছে দোয়া কামনা করছি।’

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘আল্লাহর অসীম রহমতে সালাহ উদ্দীন আহমদ মুক্তি পেয়েছেন। এতে সারাদেশের বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী অনেক আনন্দিত হয়েছেন। কারণ তার মতো এক যোগ্য নেতার শূন্যতা আমরা অত্যন্ত অনুভব করেছি। এবার মুক্তি পেয়েছেন, দেশের আসবেন তার জন্য কক্সবাজারবাসীও অনেক খুশি। আমরা তাঁর দেশে আসার অধীর প্রহর গুণছি।’