আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগির ছেলে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। খাশোগির পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছে। কয়েক মাস ধরেই খাশোগির পরিবারের সদস্যদের ওপর সৌদি আরব ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত ছিল। এমন পরিস্থিতিতেই দেশ ছেড়েছেন খাশোগির ছেলে সালাহ বিন জামাল খাশোগি।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন রাজপরিবারের সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তার নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে রয়েছে সৌদি। চলতি সপ্তাহেই খাশোগির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

রিয়াদে ইমামা প্রাসাদে খাশোগির ছেলে সালাহ ও তার ভাই সাহেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সময় বাদশাহ ও যুবরাজ তাদের সান্ত্বনা দেন। এর আগে খাসোগির ছেলেকে ফোন করে কথা বলেছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

সালাহ বিন জামাল খাশোগি সৌদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। এর আগে তার দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি সৌদিতেই অবস্থান করছিলেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সালাহকে মুক্তি দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সৌদিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ডেপুটি মুখপাত্র রবর্ট পোলান্ডিনো বলেন, সালাহকে দেশত্যাগের অনুমতি দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট এবং খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাশোগির বড় ছেলে সালাহ। গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে জরুরি কাগজপত্র আনতে গিয়ে নির্মমভাবে খুন হন খাশোগি। প্রথমদিকে এই হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করলেও পরে সৌদির তরফ থেকে বলা হয় যে, কনস্যুলেটের ভেতরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন খাশোগি। সেখানেই তিনি নিহত হন।

এই হত্যাকাণ্ডকে ভুল বলে স্বীকার করেছে রিয়াদ। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৮ জনকে শনাক্ত করা গেছে। অপরদিকে, ২১ সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বৃহস্পতিবার ক্রাউন প্রিন্স এবং বাদশাহ সালমানের সঙ্গে খাশোগির ছেলের হ্যান্ডশেকের একটি ছবি প্রকাশ পায়। শারীরিক ভাষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাক্ষাতের সময় সালাহর শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বলছে তিনি যেন এ সাক্ষাতের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না।

তার শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে তীব্র মানসিক পীড়া ও অন্তর্নিহিত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে-অনেকটা মনে কষ্ট নিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু করলে যা হয়। এমনকি হ্যান্ডশেক করার সময় সচরাচর যে আন্তরিকতা ফুটে ওঠে তা তার মধ্যে ছিল না। অনেকটা গা-ছাড়াভাবে হ্যান্ডশেক করেছেন তিনি।

এদিকে, খাশোগি হত্যার কথিত অডিও রেকর্ডিং মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র প্রধান জিনা হ্যাসপেলকে বাজিয়ে শোনানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই টেপে হত্যাকাণ্ডের সময়কার নির্যাতন, চিৎকার, দেহ কেটে টুকরো করা- ইত্যাদির শব্দ ধরা পড়েছে।

এই রেকর্ডিংয়ে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং হত্যার সময়কার শব্দ ধরা পড়েছে। একটি সূত্র টেপটিকে খুবই ‘মর্মান্তিক’ বলে বর্ণনা করেছে। যে কোন সময় এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবহিত করা হবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলেছেন, সৌদি এই ঘটনাকে খুব বাজেভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে।