ডেস্ক নিউজ:
সংলাপের দরজা খোলা রেখেই মাঠের কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগোবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সিলেটের জনসভা সফল হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাত দফা দাবি আদায়ে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথাই ভাবছে জোটটি। নেতারা মনে করছেন, সরকার তাদেরকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে। আর এ কারণেই জোট গঠনের দুই সপ্তাহ না যেতেই তাদের শীর্ষ দুই নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মাঠের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গত বুধবার সিলেটে জনসভা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। নেতারা বলেছেন, জনসভার অনুমতি দিতে প্রশাসনের গড়িমসি, নেতাকর্মীদের জনসভায় আসতে বাধা দেয়া, গ্রেফতার, তল্লাশির পরেও সিলেটের জনসভায় বিপুল মানুষ অংশ নিয়েছে। জনসভাও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যদিও সামনে ঐক্যফ্রন্টকে আরো কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামীকাল ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে এই জনসভা করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু এখনো সেই জনসভার অনুমতি মেলেনি। লালদীঘি মাঠে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো সিএমপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এরই মধ্যে সেখানে গ্রেফতার অভিযান চলছে। চট্টগ্রাম বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা মাহবুবের রহমান শামীম ও আবুল হাশেম বক্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জানা গেছে, জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজের নিরাপত্তার কথা বলে সিএমপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আগামীকাল শনিবার জনসভার অনুমতি শেষ পর্যন্ত না-ও দিতে পারে। এরপর ঐক্যফ্রন্টের তৃতীয় জনসভা রয়েছে রাজশাহীতে। আগামী ২ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। প্রথমে ৩০ অক্টোবর রাজশাহীতে জনসভা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, এসব কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করার পর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সিলেটের জনসভায় এমন আভাস দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। সাত দফা দাবি আদায়ে তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ রেখে আগামী ৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি না মেনে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে ওই দিন থেকেই সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এই জোটের। তবে তার আগ পর্যন্ত দাবি আদায়ে সরকারকে আবারো সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে। শেষ পর্যন্ত যদি সরকার সংলাপের পথে না আসে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ দিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ঐক্যফ্রন্ট স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং সমন্বয় কমিটির সদস্য মনিরুল হক চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরো একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা ঝুলছে। দুই নেতা কারাগারে যাওয়ায় সামনে কর্মসূচি সফলে আরো সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস কাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সাথে নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে আজ সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সিলেট থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।