ডেস্ক নিউজ:
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে ব্যাপক ব্যস্ততা তৈরি হয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগে। দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে মনোনয়নযোগ্য নেতা বাছাইয়ের কঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের নিজ নিজ আসনে গ্রহণযোগ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে দলীয়, পেশাদার সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যভিত্তিক জরিপের পর এবার জরিপ চলছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি উইংয়ের তত্ত্বাবধানে। এ জরিপের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংগঠনিক ও বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক এবং কার্যনির্বাহী সদস্যকে এ জরিপ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বেশ কিছুদিন ধরে তারা এ কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন আসনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি উইংয়ের তত্ত্বাবধানে এ জরিপ কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানাভাবে জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের রিপোর্ট, একাধিক পেশাদার গবেষণা সংস্থার রিপোর্ট, অন্তত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সূত্রের জরিপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রলীগের মাধ্যমে জরিপ করার উদ্যোগ নিলেও তা থেমে যায়। এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে জরিপ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বেছে বেছে কিছু নেতাকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি স্বতন্ত্র জরিপ প্রতিবেদন তৈরি হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তথ্য সংগ্রহ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে তা জমা দেবেন। পরে সেগুলো প্রতিবেদন আকারে দলের সংসদীয় বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে।

জরিপের দায়িত্ব পাওয়া নেতারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন আসনে মনোনয়নে আগ্রহীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাংগঠনিকভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কাজে লাগাচ্ছেন ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুরের একটি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমবার রাতে  বলেন, তাকে কেন্দ্র থেকে ফোন করা হয়েছিল। তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে এবং পুরোদমে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদক পর্যায়ের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের কিছু জেলা ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এর আগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ বৈঠকে সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ঐ বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিভাগীয় দায়িত্ব দেওয়া আছে, কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের সবাইকেই যে কোনও জেলা-উপজেলা নিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, এ মাসেই কেন্দ্রীয় নেতাদের জরিপ কাজ সম্পন্ন হবে বলে তারা আশা করছেন। এ জরিপে কোন আসনে কতজন প্রার্থী, মনোনয়ন ইচ্ছুকদের সাংগঠনিক পরিচয়, পারিবারিক পরিচয় ও ব্যাকগ্রাউন্ড, দলে অবদান ও ত্যাগ, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক, সাংগঠনিক তৎপরতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তার সত্যতা যাচাই এবং লাভজনক পদে থাকা ব্যক্তিদের দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি আচরণ সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী এবং সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, জরিপ নানাভাবেই হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। দলীয়ভাবে প্রার্থিতায় আগ্রহীদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে, মনোনয়ন শুধু একটি জরিপের ভিত্তিতেই হবে না। বিভিন্ন জরিপ ও নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সব থেকে যোগ্য ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে সংসদীয় বোর্ড। অনেক আগে থেকেই মনোনয়ন ইচ্ছুকদের সম্পর্কে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা সূত্রে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন, যা এখনও অব্যাহত আছে। এসব বিশ্লেষণ করে যাদের জেতার সামর্থ্য আছে, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা আছে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সদ্ভাব আছে, তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন আসনে নানাভাবে জরিপ করার কথা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন। প্রতি ছয় মাস পর পর জরিপ হালনাগাদ করা হচ্ছে উল্লেখ করে বর্তমান এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, ভালো আচরণ করা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।