বিশেষ প্রতিবেদক :
জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে দেয়া আপত্তি নিষ্পত্তি না করেই এবার ভূমি অধিগ্রহনের ‘অবকাঠামো’র ক্ষতিপূরণের টাকা অতিগোপনে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এর আগে আপত্তি নিষ্পত্তির বৈঠক চলাকালে অতিগোপনে অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারের যোগসাজসে ২৬০ ও ২৬১ নম্বর রোয়েদাদে জমি না থাকা সত্ত্বেও চার ব্যক্তি প্রায় তিন কোটি টাকা তুলে নিয়ে যান। অথচ ওই সময়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন এবং অধিগ্রহনের টাকা গ্রহন ও প্রদানে আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ জারি ছিল। ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এবং ভূক্তভোগীর অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিষ্পত্তিতে কয়েক দফা বৈঠক করেন। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি মো. আবদুর রহমান বদলির সুযোগে অভিযোগ নিষ্পত্তি না করে এবং তুলে নিয়ে যাওয়া টাকার কোন সুরাহা না করে ফের অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ দেয়ার চক্রান্ত চালাচ্ছেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। একটি প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেট ঝিলংজা মৌজার বি.এস ১২৮৫ নম্বর খতিয়ানের ১৪১৬৯ ও ১৪১৭০ দাগের ৬৬ থেকে ৭১ রোয়েদাদে থাকা অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমি অধিগ্রহন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার আবদুল বারেক বলেন, ‘বিষয়টি তেমন নয়, দু’পক্ষই ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য তদবির করছে তা ঠিক আছে। তবে আমি বলেছি যে, দু’পক্ষকে সমঝোতা করে আসতে। সামান্য ঝামেলা থাকলেও আমি কাউকে টাকা দেওয়ার পক্ষে নই।’

ভূক্তভোগী কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়ার বাসিন্দা মো. রাশেদুল করিম জানান, জমি না থাকা সত্ত্বেও অভিযোগ এবং আদালতের মামলা কোন কিছুই আমলে না নিয়ে একটি পক্ষকে প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেওয়ার পর চার মাসেও কোন সুরাহা করেনি। এভাবে এতোদিন ধরে বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে হয়রানীর মাধ্যমে এবার অবকাঠামোর টাকাও তুলে নেয়ার চেষ্টা করছে একটি চক্র। ভুক্তভোগী রাশেদ আরও জানান, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের জানারঘোনা, হাজিপাড়া, চান্দেরপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি  কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহন কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ও অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হকের যোগসাজসে সেই সময়ে তাঁর স্বজনদের জমি আমান উল্লাহসহ চার ব্যক্তি নিজেদের জমি দেখিয়ে অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি গত ১৫ জানুয়ারি ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।

উল্লেখিত জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে মর্মে অবহিত করে ৪ এপ্রিল জানানো হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককেও (রাজস্ব)। এরপরও ভূক্তভোগীর আপত্তি আমলে না নিয়ে এল.এ ০৪/১৬-১৭ নং মামলার ২৬০ ও ২৬১নং রোয়েদাদ এর চেক সম্পাদনের কাজ চলছে এমন খবরে গত ২৪ মে বিষয়টি লিখিত আকারে আবারও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন তিনি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে আলোচনাপূর্বক সার্ভেয়ার মাসুদ রানাকে এবং বিষয়টি সরেজমিন যাছাইপূর্বক ব্যবস্থা নিতে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২৭ মে সার্ভেয়ার মাসুদ রানা ভূক্তভোগিকে ফোন করে বৈঠক করার জন্য ডেকে নেন এবং সেখানে প্রতিপক্ষ ২ দিনের সময় নিয়ে ২৯ মে বৈঠক করার কথা বলেন।

যথারীতি ২৯ মে বিকাল ৪টায় অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মো. মুমিনুল হকের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং লিখিতভাবে জবানবন্দি প্রদান করেন। এর পর এ বিষয়ে আরও একটি দিন ধার্য্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ৩ জুন আদালতের সর্বশেষ আদেশসহ আবারও যোগাযোগ করা হয় সার্ভেয়ার মাসুদ রানার সাথে। তখন মাসুদ রানা আদালতের আদেশ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষকে চেক দেয়া হবে না বলে মৌখিকভাবে জানান। কিন্তু এর দু’দিন পর ভূক্তভোগি জানতে পারেন তাকে না জানিয়েই অতিগোপনে ছৈয়দুল হক, আমান উল্লাহ, নজরুল হক ও ছেনুয়ারার নামে চেক ইস্যু করা হয়।