এম.এ আজিজ রাসেল:
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এ উৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ পল্লীর প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। চলছে ধর্মীয় নাচ-গান, বয়ান ও আতশবাজি। বিহারগুলো সেজেছে নব রূপে। সর্বত্র আলোকসজ্জা। স্থানীয় বাজারগুলোতে চলছে কেনাকাটার ধূম। তিনদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, ফানুস ওড়ানো, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, অতিথি আপ্যায়নসহ বিভিন্ন বর্ণিল আয়োজন থাকবে বিহারগুলোতে। বিকাল থেকে নারী-পুরুষ শিশু, যুবক-যুবতী, আবালবৃদ্ধা বনিতা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করেন। সেখানে সুখ ও শান্তি কামনায় বৌদ্ধের নিকট প্রার্থনা করেন সবাই।

মঙ্গলবার বিকালে শহরের পিটাকেট, মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ বিহার, জাদিরাং বিহার ও কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, রাখাইন সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন গুলো ছোট ছোট নজরকাড়া ২০টি প্যান্ডেল তৈরি করেছে। এসব প্যান্ডেলের প্রধান আকর্ষণ বুদ্ধ দেবতা। গত এক সপ্তাহ ধরে ওইসব প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। নান্দনিকভাবে সেজেছে প্রতিটি প্যান্ডেল। প্রথম দিনে আকাশে তেমন ফানুস উড়ানো হয়নি। তবে বুধবার শত শত ফানুসের আলোয় আলোকিত হবে আকাশ।

তবে প্যান্ডেল তৈরিতে ব্যস্ত ছাত্র-যুবকরা হতাশার সাথে বলেন, একটি প্যান্ডেলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এসব খরচ নিজেদের থেকে বহন করতে হয়। জেলা প্রশাসন বা পৌরসভা থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তারা শুধু বিহার গুলোকে অনুদান দিচ্ছে। কিন্তু মূলত প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করে থাকে ছাত্র-যুবকদের তৈরিকৃত প্যান্ডেলসমূহ। তারা এব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়রের সুনজর কামনা করেছেন।

এবার মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে প্যান্ডেল সাজিয়েছে আরডিএফ, সিটি বয়েজ, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ফ্রি স্টাইল রিলেশনশীপ, রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল, রাখাইন যুব ইউনিটি, হ্যাংগিং গার্ডেন, রাখাইন তরুন প্রজন্ম ঐক্য পরিষদ, কে, আর ভিক্টুরি ক্লাব, রাখাইন তরুণ সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রি পরিষদ। এছাড়া মোহাজের পাড়া, বাজার ঘাটা, বৈদ্যঘোনা ও জাদিরাম পাহাড় বিহারেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর জাহাজ ভাসার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সমাপনী হবে।

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের উপাধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু ও সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং জানান, সিদ্ধার্থ যখন বুদ্ধিসত্ত রূপে শ্রাবন্তী নগর থেকে গৃহত্যাগ করেন। তখন অনুমাদ্ধর্শী নদী তীরে অবস্থান কালে অধিষ্ঠান করে নিজ চুলকে কর্তন করে উপরে দিকে নিক্ষেপ করেন। সে চুল গুচ্ছ মহাতাবতিংস স¦র্গের প্যাগোডা হিসেবে স্থির আছে। তাই চুলামনি নামে প্যাগোডা উদ্দেশ্যেই পূঁজা এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতে ফানুস উড়ানো হয় বলে জানা গেছে। তথাগত ভগবান বুদ্ধের আড়াই হাজার বছর পূর্বে সময়ের তাবতিংসা স্বর্গের তিন মাস বর্ষাবাস করে কার্ত্তিকী পূর্ণিমাকে ঘিরে মানবকুলের মহাপৃথিবীতে অবতরণ করেন।