ফাইল ছবি

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া :
আড়াই লক্ষাধিক জনগণের বসবাসযোগ্য এলাকায় অতিরিক্ত ৮ লাখ রোহিঙ্গার ভারে উখিয়ায় নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বড় সমস্যায়। প্রশাসন রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যস্ত। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত পণ্যের দাম হাকাচ্ছে। আর অসহায় ক্রেতা সাধারণ এক প্রকার জিম্মি হয়ে একান্ত প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি দামে পণ্য ক্রয় করছে।
স্থানীয় প্রশাসন প্রতিটি দোকানে নিত্য পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর নির্দেশ দিলেও তা মানা হচ্ছে না। কিছু কিছু দোকানে তালিকা থাকলেও মূল্য লেখা নেই। জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, চক দিয়ে লিখা হয়েছে তো তাই মুছে গেছে।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) উখিয়া বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে পণ্যমূল্যের দরদাম যাচাই করে দেখা যায়, ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অথচ এক সাপ্তাহ আগেও এ ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৬ টাকা দরে। হালি প্রতি ৪ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মুদির দোকানী নুরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম থেকে চড়া দামে ডিম ক্রয় করে রোহিঙ্গা বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়ভাবে ডিমের দাম বেড়ে গেছে।
তরকারির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা, বাধা কপি ৭০ টাকা।
স্থানীয় অধিবাসী হাজী আব্দুল মন্নান অভিযোগ করে জানান, সাগরে ২২ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় মাছের বাজারে সামুদ্রিক মাছ নেই বললেই চলে। সাধারণ ক্রেতারা সবজি কেনার জন্য বাজারে গিয়ে দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকার কারণে প্রতিটি সবজির বিপরীতে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে বিক্রেতারা।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তেলাপিয়া, ফার্মের বোয়াল, আর ছোট চিংড়ী ছাড়া কোন মাছ নেই। আড়াইশ গ্রাম ছোট চিংড়ী বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা করে। মাছ বিক্রেতা ফরিদুল আলম জানান, সাগরের মাছ না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। শুটকির বাজারে একই অবস্থা। কিটনাশক মিশ্রিত শুটকির দামও আকাশ চুম্বি। আড়াইশ গ্রামের শুটকি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে।
শুটকিতে ডিডিটি পাউডার মিশিয়ে শুটকি বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে শুটকি বিক্রেতা হারাধন বড়ুয়া জানান, বিভিন্ন পোকায় আক্রান্ত না হওয়ার কারণে ও মজুদ শুটকি নিরাপদ রাখার জন্য ডিডিটি পাউডার আশে পাশে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা হয় রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী তোফাইল আহম্মদের সাথে। তিনি জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে হাটবাজারের নিত্যপণ্যেও ব্যবসায়ীরা অহেতুক দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। এক কেজি মাংসের দাম সাড়ে ৪শ টাকা প্রশাসন নির্ধারণ করলেও কে শোনে কার কথা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা দরে। তাও আবার হাড় মাংস মিশ্রিত। তিনি বলেন, প্রশাসনের অবস্থা বুঝে বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছামত দাম আদায় করছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে হাটবাজার তদারকি করা যাচ্ছেনা। তবে দু’একদিনের মধ্যে উখিয়া হাটবাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।