ডেস্ক নিউজ:

সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার জন্য ইস্তাম্বুলে যাওয়া সন্দেহভাজন ১৫ সদস্যের দলটির একজন সদস্য খাশোগির পোশাক পরে সৌদি কনস্যুলেটের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যান বলে নজরদারি ক্যামেরায় দেখা গেছে। তুরস্কের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে এ তথ্য জানান।

তুরস্ক সরকারের তদন্তে পাওয়া নজরদারি ফুটেজের এক্সক্লুসিভ অংশ হাতে পেয়েছে সিএনএ। এই ফুটেজে দেখা যায়, খাশোগির পোশাক পরা, নকল দাড়ি ও চশমা চোখে এই সাংবাদিকের দৈহিক আকৃতির এক ব্যক্তি কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এই লোককে শহরের বিখ্যাত ব্লু মসজিদেও দেখা গেছে। ২ অক্টোবর খাশোগি কনস্যুলেটে ঢোকার কয়েক ঘণ্টা পর তাঁকে মসজিদে দেখা যায়। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সৌদি আরবের এই কর্মকর্তার নাম মুস্তাফা আল-মাদানি। তিনিও ওই সন্দেহভাজন ‘হত্যাকারী দলের’ সদস্য ছিলেন। খাশোগি দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করতে ওই দিন কনস্যুলেটে যান।

খাশোগির অন্তর্ধান রহস্য সম্পর্কে বেশ কয়েক দফা ‘গল্প’ পাল্টেছে সৌদি আরব। গোড়ার দিকে তারা এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। তাদের বক্তব্য ছিল, কনস্যুলেটে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই বের হয়ে যান খাশোগি। পরে ওয়াশিংটন পোস্টের এই সাংবাদিকের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হলে রিয়াদ জানায়, সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘মারামারিতে’ মারা যান খাশোগি। পরে আবার বলা হয়, খাশোগিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাশোগির মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কাজটি ‘চরম ভুল ছিল’। এই ভুল ঢাকতেই মাদানিকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় খাশোগির স্থানে। যাঁর বয়স (৫৭), উচ্চতা, দৈহিক গঠন প্রায় খাশোগির মতোই।

এক জ্যেষ্ঠ তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, মাদানিকে সম্ভবত খাশোগির ডুপ্লিকেট হিসেবে ব্যবহার করার জন্যই ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসা হয়েছিল। ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুপ্লিকেটের প্রয়োজন নেই। আমরা মনে করি, হত্যার পরিকল্পনা ছিল এবং মৃতদেহ কনস্যুলেট থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর আমরা এই উপসংহারে পৌঁছাই।’

তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে মাদানি প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে তাদের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে খাশোগির হত্যাকাণ্ড ইচ্ছাকৃত নয়। ১৫ সদস্যের ওই দলের অন্য সদস্যদের তুলনায় মাদানি অন্তত ১০ বছরের বড়। খাশোগির মৃত্যু হওয়ার পর তিনি খাশোগির পোশাক পরে কনস্যুলেটের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যান। এক সহযোগী তাঁর সঙ্গে ছিলেন। ওই দিন খাশোগি কনস্যুলেটে ঢোকেন কালো ব্লেজার, ধূসর রঙের কলার খোলা শার্ট এবং ট্রাউজার পরে।

ঘটনার চার ঘণ্টা আগে মাদানি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেন। তখন তাঁর পরনে ভিন্ন পোশাক ছিল। তুরস্কের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদানি যখন খাশোগির পোশাক পরছিলেন তখনো হয়তো কাপড়গুলোতে খাশোগির গায়ের উষ্ণতা লেগে ছিল।’ সূত্র : সিএনএন।