ডেস্ক নিউজ:
কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তথা ওই কর্মচারীর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে—এমন বিধান রেখে ‘সরকারী চাকুরি বিল-২০১৮’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক।

বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়েও যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫ ধারায়ও এ বিধান বলবৎ রাখা হয়। তবে এই বিধান কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না মর্মে বিধান করা হয়েছে সংসদে উত্থাপিত বিলে।

বিলটির একাদশ অধ্যায়ের ‘সরকারী কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধ’ শীর্ষক ৪১ ধারার উপধারা (১)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারী কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’

বিলের একই ধারার ৩ উপধারায় বিচারাধীন কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি কর্মচারী হলে সেটা সরকার ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জানানোর বিধান রাখা হয়েছে। একই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধের কারণে এক বছরের বেশি মেয়াদে কারাদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণকৃত ব্যক্তিকে অনুরূপ বরখাস্ত বা অপসারণ থেকে অব্যাহতি প্রদানের বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতি রয়েছে, তাহলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ওই শাস্তি থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে ওই কর্মচারী পুনরায় চাকরিতে বহাল হবেন।’

বিলের চতুর্থ অধ্যায়ে ৭ ধারায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগলাভের একমাত্র মানদণ্ড ও ভিত্তি হিসেবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা স্থির করা হয়েছে। পদোন্নতির মানদণ্ড ধরা হয়েছে কর্মচারীর মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ এবং সন্তোষজনক চাকরি। এ ছাড়া বাংলাদেশের নাগরিক নয়—এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ করা যাবে না। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় আবশ্যিক করা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে। কোনো পদে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সুস্পষ্ট বিধান না থাকলে বা জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সম্ভব না হলে কর্তৃপক্ষ যা উপযুক্ত মনে করবে, তার ভিত্তিতেই জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করতে পারবে। আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কাউকে আত্তীকরণ করা যাবে না।

বিলে সরকারি কর্মচারীকে আচরণ ও শৃঙ্খলাজনিত কারণে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। কোনো কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষার্থে শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীরা অনুদান, সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ এবং অগ্রিম প্রদান সুবিধা পাবেন। সরকারি কর্মচারীর পরিবার বলতে কর্মচারী পুরুষ হলে স্ত্রী বা স্ত্রীগণ, মহিলা হলে তাঁর স্বামী, কর্মচারীর সঙ্গে বসবাসরত এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল সন্তান-সন্ততিগণ, পিতা-মাতা, দত্তক সন্তান, নাবালক ভাই, অবিবাহিতা, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা বোন পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বিলে আরো বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে, যেকোনো কর্মচারী অবসরে যাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করতে পারবেন। একবার লিখিত আবেদন করলেই তা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনোভাবে তা আর সংশোধন করা হবে না। এর আগে তৈরি করা খসড়ায় অবসরের বয়স নির্ধারণ করা হয় ২০ বছর।