ডেস্ক নিউজ:
‘বায়ো রিক্রুটমেন্ট’ পদ্ধতিতে বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে বায়রার দেয়া প্রস্তাব বিবেচনা এবং দ্রুততম সময়ে কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, ওই বিষয়ে গঠিত কমিটিকে পদক্ষেপ নিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। নতুন পদ্ধতিতে চালু হতে যাওয়া মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলেও বায়রার প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

শুধু মালয়েশিয়া নয়, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আবুধাবি, ওমান, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ইরাক, মরিশাসসহ শ্রমবান্ধব দেশভেদে সর্বোচ্চ কত টাকায় একজন কর্মী যেতে পারবেন তারও একটি পরিসংখ্যান প্রস্তাবে তুলে ধরা হয়েছে। বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের দেয়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে বিদেশে কর্মী পাঠাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে দীর্ঘ দিন ধরে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, বিদেশগামী শ্রমিক ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যে যন্ত্রণা পোহাচ্ছেন, তা আস্তে আস্তে দূর হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৮ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহানের নেতৃত্বে ‘বিদেশে শ্রমিক প্রেরণে অভিবাসন ব্যয় কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরো উপস্থিত ছিলেনÑ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজা, বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদ, মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানসহ বায়রার অন্য নেতারা।

ওই বৈঠকে বায়রার পক্ষ থেকে ৮ মাস আগে দেয়া ‘বায়ো রিক্রুটমেন্ট’ পদ্ধতির প্রস্তাব ছাড়াও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠাতে ঢাকার দূতাবাসে পাসপোর্ট, ভিসা জমা দেয়া এবং ওঠাতে ‘ড্রপবক্স’ পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি বলে মন্ত্রণালয় ও বায়রা সূত্রে জানা গেছে। তবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে নতুন পদ্ধতিতে চালু হলে তখন যাতে কম টাকায় এবং বিশৃঙ্খলা ছাড়া শ্রমিকরা যেতে পারেন, সে জন্য গঠিত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ডিজিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কিভাবে কোন পদ্ধতিতে খোলা যেতে পারে, তা নির্ধারণে ২৬ অক্টোবর কুয়ালালামপুর থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের কথা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান ৮ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএমইটির ডিজি ও বায়রা নেতাদের উপস্থিতিতে যৌথসভার আলোচনা প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে ‘বায়ো রিক্রুটমেন্ট’ পদ্ধতি কিভাবে হবে তা সাবমিট করেছি। মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাব দেখার জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর ডিজিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রণালয়, বিএমইটি ও বায়রার দুইজন সদস্য থাকবেন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী মহোদয়ও তাদের দেয়া প্রস্তাবটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বৈঠকে বায়রা নেতাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এত দিন তারা যে ধরনের চিন্তা করছিলেন তার সাথে বায়রার দেয়া প্রস্তাবটির ৯৫ শতাংশ মিল রয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে অথবা তারও আগে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের জন্য একই পদ্ধতিতে অভিবাসন ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গঠিত কমিটিকে বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে কত টাকা অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে, জানতে চাইলে বায়রা মহাসচিব নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যেই একজন শ্রমিককে পাঠাতে পারব বলে উল্লেখ করেছি। এ টাকায় কর্মী যাওয়ার পরও সব খরচ বাদ দিয়ে আমাদের ১৫-২০ হাজার টাকা লাভ থাকবে। তা ছাড়া প্রস্তাব মোতাবেক যদি ‘বায়ো রিক্রুটমেন্ট’ পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হয় তাহলে কর্মীরা যেমন কম টাকায় বিদেশ যেতে পারবেন, তেমনি দালালদের উৎপাতও কমে আসবে। এসব শুনে কমিটি বায়ো রিক্রুটমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কোন পদ্ধতিতে কর্মী যাবে; তা নির্ধারণ করতে চলতি মাসের শেষের দিকে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকা আসার কথা রয়েছে। দুই দেশের মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পরই বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসে ভিসা কাগজপত্র জমা ও উত্তোলনসংক্রান্ত কোনো এজেন্ডাই ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি, ড্রপবক্স নামে যদি নতুন সিস্টেম চালু করতে হয়, তাহলে বায়রার মাধ্যমে করতে হবে। এমন প্রস্তাব আমরা বায়রা নেতারা তিনবার ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে অনুরোধ জানিয়ে এসেছি। প্রবাসী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

বোয়ো রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতি হচ্ছে, একজন বিদেশগামী কর্মী জেলা জনশক্তি অফিসে অনলাইন পদ্ধতিতে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করবেন। তিনি যে দেশে যেতে ইচ্ছুক ওই দেশের অভিবাসন ব্যয় কত আছে, তা তিনি নিজেই স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। সেই মোতাবেক নিজে তার টাকা তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে জমা করতে পারবেন। এরপর ফিঙ্গারপ্রিন্ট, মেডিক্যাল, ভিসাসহ অন্যান্য প্রসেসিং শেষ হলেই গন্তব্যর উদ্দেশ পাড়ি জমাবেন। মোট কথা দালাল ছাড়াই কর্মীর বিদেশ যেতে কোনো বাধা থাকছে না।