মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু নাইক্ষ্যংছড়ি:
পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে উপজাতীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ও আকষর্ণীয় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে ৩৭টি পাহাড়ী বৌদ্ধ পল্লীগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে ।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ধুংরী হেডম্যান পাড়া, মধ্যম চাক পাড়া, হেডম্যান চাক পাড়া, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম পাড়া, মারইজ্ঞা পাড়া, হেডম্যান পাড়া, লামার পাড়া, জুমখোলা, বাইশারী ইউনিয়নের ধৈয়ারবাপের পাড়া, ধাবনখালী পাড়া, গুদাম পাড়া, ছাদুঅং পাড়া, হেডম্যা চাক পাড়া, নতুন চাক পাড়া, মধ্যম চাক পাড়া, উপর চাক পাড়া, আথুইমং পাড়া, মইঅং পাড়া, দৌছড়ি ইউনিয়নের ঐক্যজাই হেডম্যান পাড়া, ধর্মছড়া, কুরিক্ষ্যং, ঘুমধুম ইউয়িনের বাইশফাড়ি, মনজয় পাড়া সহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারগুলোকেও সাজানো হচ্ছে বর্ণিল রূপে। ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর পাড়ায় মহল্লায় চলছে উৎসবের আমেজ। স্থানীয় বাজার গুলোতে উৎসবকে ঘিরে নতুন কাপড় কেনাবেচার ধুম ও অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য নিজ বসত ঘরের সাজঘোজ।

স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান প্রবারণা উৎসব। প্রবারণা কথাটির অর্থ বিশেষভাবে বারণ করা, নিবারন করা বা আত্মনিবেদন। ক্ষুদ্রস্বার্থ ও সঙ্কীর্ণতা পরিহার করার উৎসব হচ্ছে প্রবারণা উৎসব।

বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রবারণাকে ‘বড় ছাদাং’ বলেও অভিহিত করেন। ‘ছাদাং’ অর্থ উপোস দিবস। প্রবারণা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বৌদ্ধরা উপোস, ব্রত পালন, পরিষ্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হয়ে বুদ্ধকে পূজা, ভিক্ষুদের আহার করানো, ধর্মসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোমমবাতি ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের আয়োজন করেন।
২৭৮নং বাইশারী মৌজা হেডম্যান মংছানু চাক জানান, প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের ভেতরের অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তিন মাসব্যাপী নির্জন আশ্রমে বাস করেন। একে আশ্বিনী পূর্ণিমাও বলা হয়। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে আকাশকে আলোকিত করতে রঙ্গিন আলোর ফানুস উড়ানো। উৎসবকে ঘিরে আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠানেরও।

তিন দিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির আয়োজনে রথ যাত্রা, বিভিন্ন পাড়ায় ও গ্রামে পিঠা উৎসব সহ নানা আয়োজন। উৎসবের আরেক প্রধান আকর্ষণ রথ তৈরি। রথটি উৎসবের প্রতিদিন বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে প্রদক্ষিণ করানো হবে। তারপর হাজার হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে মধ্য রাতে স্থানীয় গর্জই খালে বিসর্জন দেওয় হবে। প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে তিন মাস বর্ষাবাসের। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এরপর শুরু হবে কঠিন চীবর দানোৎসব।