শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সকল কল্পনা-জল্পনা আর সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে মহেশখালী-কুতুবদিয়া অঞ্চলের ৬ বাহীনির ৪৩ জন জলদস্যু ও সন্ত্রাসী। তাদের থেকে ৯৪টি অস্ত্র ৭৬৩৭টি গুলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ জলদস্যু ও দাগী সন্ত্রাসী। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১২টায় মহেশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই আত্মসমর্পণ করেন এসব সন্ত্রাসী ও জলদস্যুরা জানিয়েছেন র‌্যাব সূত্র।

সূত্র মতে, উক্ত সমাবেশে মহেশখালীর আনজু বাহিনীর ১০ জন সদস্য, ২৪টি অস্ত্র, ৩৪৫ টি গোলাবারুদ, কুতুবদিয়ার রমিজ বাহিনীর ২ জন, ৮ টি অস্ত্র ১২০ টি গোলাবারুদ, নুরুল আলম ওরফে কালাবদা বাহিনীর ৬ জন, ২৩ টি অস্ত্র, ৩৩৩ টি গোলাবারুদ,  জালাল বাহিনীর ১৫ জন, ২৯ টি অস্ত্র ৬ হাজার ৭৯৮ টি গোলাবারুদ,  আইয়ুব বাহিনীর ৯ জন, ৯টি অস্ত্র ৩৭ টি গোলাবারুদ ও  আলাউদ্দিন বাহিনীর ১ জন, ১ টি  অস্ত্র, ৪টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে- এসএমজি ১ টি, ব্রিটিশ ৩৪ রিভলবার ১টি, দেশি পিস্তল ২ টি, দেশি একনলা বন্দুক ৫২টি, দেশি দুই নলা বন্দুক ২টি ওয়ান শ্যুটারগান ১৯টি, থ্রি কোয়ার্টার ১৫টি ও ২২ বোর রাইফেল। আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, অপরাধজগত ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য দীর্ঘদিন যাবত কৌশলে অপরাধীদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছিল। পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে এই প্রচেষ্ট চালিয়ে আসছিলো। তবে এর মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনের দু’সাংবাদিক। এরই অংশ হিসেবে আজ শনিবার ৬ বাহীনির ৪৩ সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি ছিলেন। মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এবং পুলিশের আইজি, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, র‌্যাব-৭ এর কমান্ডার, কোস্টগার্ডের কমান্ডারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।

এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনা রয়েছে দেশে কোনও অবস্থাতেই মাদক ও অস্ত্রবাজ থাকতে পারবে না। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকার জলদস্যু ও সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এসব জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দেবো।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখনও যারা আত্মসমর্পণ করেননি তাদের এখনও সময় আছে। সুযোগ থাকতে দ্রুত অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করুন। না হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’

র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে উপকূলের সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। যারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন তারা তাদের আগামী জীবনটা অত্যন্ত সুন্দর হবে- সেই নিশ্চয়তা আমরা দিচ্ছি। আর যারা সাড়া দেয়নি তাদের পরিণতি খারাপ হবে। আমরা সন্ত্রাসী-জলদস্যুকে ছাড় দেবো না। কার কাছে অস্ত্র আছে আমরা সব জানি। তাদের সবাইকে ধরা দিতেই হবে। সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা এনে আমরা মহেশখালীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবো।’

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের প্রায় আড়াই শতাধিক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। র‌্যাব ও যমুনা টিভির সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিমের প্রচেষ্টায় এসব জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছিল। ওই সব জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করায় সুন্দরবনে শান্তি ফিরে এসেছে। সে সফলতার সূত্র মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী ও আনোয়ারার সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর উৎসাহ বোধ করে র‌্যাব। আর তাতে সহযোগী এগিয়ে আসেন মহসিনুল হাকিম ও চ্যানেল ২৪’র সাংবাদিক আকরাম হোসাইন। তারা দীর্ঘ দিন ধরে এসব এলকার সন্ত্রাসী ও জলদস্যুদের বুঝিয়ে আসছিলেন। এতে অধিকাংশ সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী। এর মধ্যে মহেশখালীর ৪৩ দাগী সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী ও জলদস্যু আত্মসমর্পণ করলেও আরো অনেক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তালিকায় পুরো উপজেলার সন্ত্রাসী রয়েছে। এর মধ্যে কুতুবদিয়া, কালারমারছড়া, নোনাছড়ি, ঝাপুয়া, আঁধারঘোনা, হোয়ানকের কালাগাজিরপাড়া, কেরুনতলী, বড়মহেশখালী, কুতুবজোম ও সোনাদিয়ার বেশ কিছু সন্ত্রাসী। এসব সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসলে পুরো মহেশখালীতে শান্তি ফিরে আসবে প্রশাসন ও সাধারণ লোকজন আশা করছেন। তবে আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে, কারণ, কিছু সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ না করলে তাদের কারণে পুরো প্রক্রিয়ার সফলতা ভেস্তে যেতে  পারে।