আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি যুবরাজসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের হাত থাকার সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার প্রেক্ষাপটে রিয়াদের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনের জোয়ার উঠেছে নানা মহল থেকে।

মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকার এবং হল্যান্ড ও ফ্রান্স রিয়াদের ওই সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে।

তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগি নিহত হওয়ার ঘটনা এখন রিয়াদের জন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির পাশাপাশি সৌদি অর্থনীতিকেও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, কোম্পানি এবং অনেক সংবাদমাধ্যমবয়কট করেছে ‘মরুভূমির ড্যাভোস’ নামে পরিচিত রিয়াদের ওই সম্মেলন। আগামী ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবরে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

রিয়াদের রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্রিটেন ও ইহুদিবাদীদের মদদে বিকশিত নজদের ওয়াহাবি গোষ্ঠীর সহযোগী হিসেবে হিযাজ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রক সৌদ বংশ তাদের পুরনো অভ্যাসকে খুব কমই দমিয়ে রাখতে পেরেছে।

লেবাননের দৈনিক আল আখবার ‘জামাল আবদুন নাসের থেকে জামাল খাশোগি’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে সৌদি কুকর্মের ইতিহাস প্রসঙ্গে লিখেছে, বিরোধীদের নৃশংসভাবে খুন ও গুম করার কাজে সৌদ বংশের কুখ্যাতি ছিল সর্বজনবিদিত।

বিমানে বোমা পেতে রেখে মিসরের জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী নেতা জামাল আবদুন নাসেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল সৌদি সরকার। ১৯৫৮ সালের ৭ মার্চ সিরিয়ায় নাসেরের সফরের সময় ওই বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর চক্রান্ত করেছিল তৎকালীন সৌদি সরকার। কিন্তু ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে পড়ায় গোটা বিশ্বে কলঙ্কিত হয়েছিল সৌদি ইমেজ।

একই প্রসঙ্গে রিয়াদ সফরের সময় লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সা’দ হারিরিকে আটকে রাখার ঘটনাও স্মরণীয়। বর্তমান সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশে হারিরিকে আটকে রেখে তাকে আল-আরাবিয়া টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে পদত্যাগপত্র পাঠে বাধ্য করা হয়।

সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর থেকে স্পষ্ট সে সময় সৌদি হস্তক্ষেপ ও লেবাননি প্রধানমন্ত্রীকে পণবন্দি করার সৌদি হঠকারিতার জবাবে হিজবুল্লাহ’র নেতৃত্বে লেবাননিদের ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় পদক্ষেপ এবং হারিরিকে মুক্ত করার ব্যাপারে ফরাসি সরকারের মধ্যস্থতা না থাকলে হারিরির পরিণতিও হয়তো খাশোগির মতই হতো।

খাশোগিকে হত্যার পরিণতিতে সৌদি যুবরাজ বিন সালমানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ অপরিণামদর্শী এই যুবরাজ হঠকারী নানা পদক্ষেপ নিয়ে সৌদি রাজবংশ ও শাসকগোষ্ঠীকে কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

খাশোগির গুম ও খুন হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব-মোড়ল মার্কিন সরকারের জন্য পথ খুলে গেছে! বিন সালমান তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অঢেল অর্থ ঘুষ দেয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত রয়েছেন। কিন্তু এসবের বিনিময়েও যুবরাজের সামনে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

পাশ্চাত্য তেল-সংকটকে ভয় পেলেও ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণের নামে সৌদি সরকারের ওপর বড় ধরনের জরিমানা চাপিয়ে দিতে পারে।

যুবরাজ বিন সালমান দুর্নীতি দমনের নামে শাহজাদা ওয়ালিদ বিন তালালসহ ৩৫০ জন শীর্ষস্থানীয় সৌদি ব্যবসায়ীকে আটকে রেখেছেন। ফলে বিনিয়োগ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিন সালমান লোহিত সাগরের তীরে বিশাল অবকাশ-কেন্দ্র গড়ে তোলা ও ২০৩০ শীর্ষক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়ার মত যেসব স্বপ্ন দেখছিলেন তা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পার্সট্যুডে।